উখিয়ায় দুই বছরেও শেষ হয়নি সড়ক সংস্কার কাজ, জনদূর্ভোগ চরমে!

 

পলাশ বড়ুয়া:


দীর্ঘ দুই বছর সময় অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারের উখিয়া কোর্টবাজার-সোনারপাড়া সী-বিচ সড়কের সংস্কার কাজটি শেষ হয়নি। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের দুই অংশে সৃষ্ট খানা-খন্দে হাটু পরিমাণ পানি জমে থাকে। এতে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনাসহ নষ্ট হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহন। এনিয়ে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে, প্রায় দুই বছর আগে চিটিজি-৩ প্রকল্পের আওতায় ২৯ কোটি+ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের সড়কটির টেন্ডার সম্পন্ন হয়। কক্সবাজারের মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ পরিচালিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমইউ আজাদ জেবিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়। বর্তমানে কোটবাজার-সোনারপাড়া বাজারের কিছ আংশিক কাজ বাকী রয়েছে। যেখানে আরসিসি ঢালাই দিতে হবে। কাজটি দীর্ঘসূত্রীতার কারণ হিসেবে ঠিকাদারের উদাসীনতার সাথে স্থানীয়দের অসহযোগিতাকে দুষলেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ইতোমধ্যে সড়কে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, সড়কের দুই অংশে আরসিসি ঢালাই দেয়া হবে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং বাজেট সংকুলান না হওয়ায় একটু বিলম্বিত হয়েছে। পূর্বের নির্ধারিত মূল্যেই সংস্কার কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কোর্টবাজার স্টেশনের চৌ-রাস্তার মোড় থেকে গুরামিয়া সওদাগরের বাড়ির পর্যন্ত এই অংশে আরসিসি ঢালাই করার নামে গত দুই বছর ধরে ফেলে রেখেছে। একই অবস্থা সোনারপাড়া বাজার থেকে পূর্বপার্শ্বে কবরস্থান পর্যন্ত অংশে বেহাল দশার চিত্র।

নজরুল ইসলাম নামে একজন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ শেষ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে পুকুরে পরিণত হয়েছে। এতে যানবাহন ও জনচলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি এ ধরণের বাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করার দাবী করেন।

এর আগেও সড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবীতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন, সড়কে ধানের চারা রোপন করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানিয়েছেন, মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় সময় টেন্ডারে দ্রব্যে মূল্যে বৃদ্ধির অজুহাতে শতভাগ কাজ শেষ না করে পুনরায় দরপত্র দিয়ে কাজ করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটাও নতুন কিছু নয়।

দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির সংস্কার কাজ বন্ধ কেন এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ’র মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে আরআরআরসি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এলজিইডি’র দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনদূর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী।

তিনি লিখেছেন, কোটবাজার-সোনারপাড়া সড়কটি সমগ্র কক্সবাজার জেলার মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশ-বিদেশের ভিআইপি-ভিভিআইপি এই সড়ক দিয়েই আসা-যাওয়া করছেন।

এছাড়াও জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পান-সুপারি, সামুদ্রিক মাছ, পোনাবাহী শত শত গাড়ী চলাচল করে থাকে। অথচ, সড়কটি মেরামতের অভাবে সম্পুর্ন ভাবেই যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

তিনি এও বলেছেন, সড়কটি এলজিইডির আওতাধীন হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক শত শত গাড়ী আসা-যাওয়ার ফলেই এই দূর্দশায় পতিত হয়েছে। তাই এলজিইডির পাশাপাশি হোস্ট কমিউনিটির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা অত্যন্ত যুক্তি সংগত। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, এটা মূলত: এলজিইডি’র কাজ। তবুও জনদূর্ভোগ লাগবে তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, কাজটির ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী অনেক আগে শেষ হওয়ার কথা। দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি হতেই পারে, তাই বলে কাজ না করে পেলে রাখার সুযোগ নেই।

আরও খবর