ডেস্ক রিপোর্ট •
মিয়ানমার উপকূলের কাছে নৌকা ডুবে শিশুসহ ১৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও অন্তত ৫০ জন।
মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, খারাপ আবহওয়ার মধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে গেলে তাদের মৃত্যু হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৯০ জন যাত্রীসহ নৌকাটি ডুবে যায়।
ডুবে যাওয়ার পর স্রোতে বেশ কিছু মরদেহ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা আরও জানাচ্ছে, মুসলিম-অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিতওয়ে থেকে ১৯ মে নৌকাটি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কয়েক দিন পর বাজে আবহওয়ার মধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জ মিন তুন জানিয়েছেন, রাখাইনের দক্ষিণাঞ্চলের থাপেই মাও দ্বীপ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওই নৌকাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, ‘নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে ১৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে, মানব পাচারকারী দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এই ঘটনাকে ‘ভায়বহ এবং দুখঃজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক ইন্দ্রিকা রাতওয়াত্তে বলেছেন, ‘সর্বশেষ এই ট্র্যাজেডি আমাদের আবারও একবার দেখিয়ে দিল যে—মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এই এলাকায় কী ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে।’
সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া এক পরিবারের সাত রোহিঙ্গা
এদিকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার আরও দুটি রোহিঙ্গা পরিবারের নয়জন সদস্য কক্সবাজারের টেকনাফের দুটি আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করেছেন। ক্যাম্প দুটিতে তাঁদের শনাক্ত করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এর মধ্যে সাত সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নেয় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরে। এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ দম্পতি আশ্রয় নিয়েছে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী আশ্রয়শিবিরে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম। বিকেলে আশ্রয়শিবিরে আসা রোহিঙ্গাদের বরাতে এপিবিএন থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
এক পরিবারের সাতজন হলেন– গুলবাহার (৬০), আবু তাহের (২৭), হামিদা বেগম (২৪), আবুল মনসুর (২১), ইয়াছমিন (১৮), খুরশিদা (৩) ও আয়েশা (৫ মাস)। দালালের মাধ্যমে ভারত থেকে মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে জানান তাঁরা। বেলা তিনটার দিকে গোপনে হোয়াইক্যং চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরের ই-১ ব্লকের বাসিন্দা আবুল কাশেমের ঘরে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ তাঁদের আটক করে।
আলীখালী আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করা রোহিঙ্গা মো. জামাল (৬৫) ও তাঁর স্ত্রী নূর জাহান (৬০) জম্মু–কাশ্মীর থেকে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আজ আটটার দিকে আলীখালী আশ্রয়শিবিরে ডি-২০ ব্লকে বসবাসরত তাঁদের মেয়ে গোল মরিজানের ঘরে আশ্রয় নেন।
এই দম্পতি জানান, ২০১৮ সালে দালালের মাধ্যমে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের আশ্রয়শিবিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর সেখানে চার বছর বসবাস করে আবার দালালের মাধ্যমে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ফের বাংলাদেশে চলে এসেছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, আশ্রয়শিবির থেকে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সহকারীদের অবহিত করা হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় ওই দুটি পরিবারের নয়জন সদস্যকে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
কিছুদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভারত সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে বিগত পাঁচ বছরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে। তাদের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-