আজ থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ : রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ১৪ নির্দেশনা

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক •

বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

শুক্রবার (২০ মে) থেকে দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। ওই চিঠিতে ডজনখানেক নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত চার জেলার স্বদেশী নাগরিকদের ভোটার হতে গেলে বাড়তি যাচাইয়ের মধ্যদিয়েও যেতে হয়। কেননা, বাংলাদেশি নাগরিক প্রমাণে তাদের বাড়ির দলিলসহ নানাধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সব মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, এনএসআই, ডিজিএফআই, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড, বর্ডার গার্ড ও র‌্যাবের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, বিভাগীর কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, চার জেলার সব জেলা প্রশাসক, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।

ইসির নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে
১. রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা মিথ্যা কাগজপত্র সরবরাহ করেন এবং তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।

২. বিশেষ এলাকাসমূহে ভোটারদের ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।

৩. বিশেষ এলাকাসমূহে ভূমিহীন সনদে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের প্রত্যয়ন ছাড়া কাগজাদি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না এবং জমির খতিয়ানদলিল (দাদা-পিতা-স্বামী-নিজ নামীয়) সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের প্রত্যয়নকৃত না হলে তা অগ্রহণযোগ্য হবে

৪. রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করেন তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।

৫. হালনাগাদ কার্যক্রম ও চলমান প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকায় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া থেকে নিবৃত করার বিষয়ে কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং প্রচলিত আইনানুগ ফৌজদারী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৬. হালনাগাদ কার্যক্রমে বিশেষ এলাকাগুলোতে জমির দলিল ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নির দলিল নোটারির মাধ্যমে করা হলে তা অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা।

৭. বিশেষ এলাকাগুলোতে বাংলাদেশি ছেলের সঙ্গে মিয়ানমারের মেয়ে এবং মিয়ানমারের ছেলের সঙ্গে বাংলাদেশি মেয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাগরিক দাবিকারীদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করা যাবে না।

৮. বিশেষ এলাকাগুলোতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী যেসব বাংলাদেশের নাগরিকরা গৃহ পাবেন, তাদের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে গৃহ পাওয়ার বরাদ্দপত্র, গৃহ গ্রহণের প্রমাণ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ইস্যু করা নাগরিকত্ব-জাতীয়তা সনদপত্রে স্মারক নম্বর ও তারিখ সম্বলিত কাগজাদি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যয়ন করা হলে তা যাচাই করে নেওয়া যাবে।

৯. রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিক সনদ, তার বাবা-মা-স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি, বাবা-মায়ের নাগরিক সনদ, কাবিননামা (বিবাহিত হলে), পাসপোর্ট (যদি থাকে), পাবলিক পরীক্ষার সনদ এবং অনলাইন জন্মমৃত্যু সনদের ভেরিফাইড কপি যাচাই করার পর গ্রহণযোগ্য হবে।

১০. স্থানীয় মেয়র-চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্প্রতি দেওয়া জাতীয়তা নাগরিকত্ব সনদের মূলকপি, স্মারক নম্বর ও তারিখ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র, ছবিযুক্ত ও ছবির ওপর কর্তৃপক্ষের সিলমোহর সম্বলিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।

১১. রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য ফরমের পাশাপাশি ভোটারযোগ্য নাগরিকগণকে অনলাইন নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) পূরণ এবং পূরণকৃত ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দাখিল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আব্যশিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে।

১২. রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান, সাধারণ মেম্বার, সংরক্ষিত মেম্বার, চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাগুলোতে বা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১৩. এছাড়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাগুলোরে ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা কাগজপত্রাদি বিশেষ কমিটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ কমিটিকে বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে নির্দেশনায়। রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে ইসির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

১৪. রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩০টি বিশেষ এলাকা (উপজেলা) হলো: কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির জেলার রাঙ্গামাটি সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল। চট্টগ্রামের জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া ও বাঁশখালী। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩০ উপজেলাকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে ইসি।

চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৪০ উপজেলায় কার্যক্রম চলবে আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত। এরপর তিন ধাপে অন্যান্য উপজেলায় হালানাগাদ করবে ইসি।

আরও খবর