রোহিঙ্গাদের বর্জে হুমকির মুখে খাদ্যনিরাপত্তা

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •

উখিয়া বালুখালী ২ ক্যাম্প ১১ এর রোহিঙ্গা বর্জে স্থানীয় একটি খালে পানির দূষণ। ছবি: হুমায়ুন কবির জুশান

আইন অমান্য করে যত্রতত্র ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি করায় কৃষি জমি হারাচ্ছে।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। সেইসঙ্গে মাটির উর্বরতা হ্রাস, পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার ফলে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্মল বাতাসের পরিবর্তে দুগর্ন্ধে পথ চলা দুষ্কর।

স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জে জমির ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকাংশে কমে যাবে। একপর্যায়ে এসব জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এতে হুমকির মুখে পড়বে এখানকার খাদ্য নিরাপত্তা।

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে অবশেষে গত ১৭ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জে ধ্বংস হওয়া কৃষি জমি দেখতে এবং কৃষির উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দোজ্জা। তিনি এসেই তাৎক্ষনিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ পরিস্কারের কাজ শুরু করেন।

পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, যত ইট ব্যবহার করা হয়, তার সবই কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি পুড়িয়ে তৈরি করতে হয়। কৃষি জমিতে হঠাৎ করে অট্রালিকা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এতে কৃষি জমি কমছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে এখানকার বন, পাহাড় এমনকি ফসলি জমিও নষ্ট হয়েছে। পরিবেশ হয়েছে কলুষিত। আগেকার সেই মুক্ত বাতাস আর নেই। অপরিকল্পিত এবং অবৈধ ইটভাটা পরিবেশের জন্যে মারাত্নক ক্ষতিকর।

উখিয়া-টেকনাফ এলাকায়, লোকালয় ও বনাঞ্চলের আশপাশে, পাহাড়ের পাদদেশে এবং ফসলি কৃষিজমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া অনেক ইটভাটায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে না।

ক্যাম্পে বর্জ ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রতিটি এনজিওর কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য মারাত্নক হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।

• সন্তানকে ফেলে তিনি কোন মতেই মিয়ানমারে যাবেন না •

ক্যাম্পের পাশে স্থানীয় রফিক মাহমুদ বলেন, এক কাপড়ে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখন কোটিপতি। তাদের আত্নীয়-স্বজন মালেশিয়া থেকে শুরু করে মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ক্যাম্পে থাকায় স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয়দের নামে টমটম, সিএনজি গাড়ি ক্রয় করে তা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এই গাড়ি ক্যাম্পে চলাচল করছে। কাগজপত্রে গাড়ির মালিক স্থানীয় হলেও প্রকৃত পক্ষে এই গাড়ি রোহিঙ্গাদের। স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এমনি নানা কৌশলে এরা বৈধ অবৈধ ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা অল্পতে তুষ্ট। তারা দিনে আনে দিনে খায় এমন অবস্থা। তবে অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার মুহিবুল্লাকে তারা হত্যা করেছে।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, মিয়ানমার সরকারের নানা শর্তের গ্যাড়াকলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। বছরের পর বছর স্থায়িত্বের কারণে রোহিঙ্গারা আগের অবস্থানে নেই। তাদের কারণে যানজট,জনজট ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতাসহ নানাবিধধ সমস্যায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি জিয়াবুর রহমান বলেন, মিয়ানমারে আমাদের ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি, ও ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে এসে এখানে কি আমরা ইচ্ছা করে থাকতে এসেছি। এই গরমে থ্রীপলের ছাউনিতে ছোট্র ঘরে কষ্ট করে আমরা থাকছি। আমরা সাধধারণ রোহিঙ্গারা এখানে ভালো নেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা পেলে আজই আমরা দেশে যেতে প্রস্তুত।

রোহিঙ্গা নারী নুরে জান্নাত বলেন, ক্যাম্পের পরিবেশ ভালো লাগছে না বলেই একটু প্রশান্তির আশায় আমার বান্ধবী নুর কায়েদা মালেশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন নদী পথে।

মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছু ফিরে পেলে অবশ্যই যাবো। মিয়ানমার সরকার এখানে ক্যাম্পে জন্ম নেয়া সন্তানদের নিতে চাইবে না সে ক্ষেত্রে সন্তানকে রেখে মিয়ানমার যাবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সন্তানকে ফেলে তিনি কোন মতেই যাবেন না।

আরও খবর