জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উখিয়ায় বেড়েছে রাজনৈতিক দলের তৎপরতা!

হুমায়ুন কবির জুশান :

দেশের জাতীয় নির্বাচনে ভাগ্যবান আসনের মধ্যে কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হবেন সেই দলই সরকার গঠন করে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই এমনটি দেখে আসছেন এখানকার মানুষ।

বিশ্বময় পরিচিত মানবতার শহর হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় উখিয়া-টেকনাফের আলাদা কদর রয়েছে। সেই সাথে বদনাম আছে ইয়াবার কারণে। বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মিয়ানমার সীমান্ত পথে টেকনাফ হয়ে। ইয়াবার গডফাদাররা সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উখিয়া-টেকনাফ মাদকের স্বর্গরাক্যে পরিণত হয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে। আশির দশকের উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন এজাহার মিয়া কোম্পানি। এজাহার মিয়ার রাজনীতির শুরু জিয়াউর রহমানের জাগদলে। পরবর্তী সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচিত হন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে।

এক সময় একটি কথা প্রচলিত ছিল, এজাহার কোম্পনি যেদিকে যান, সেদিকেই ঘোরে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির চাকা। এই এজাহার মিয়ার দেখানো পথেই হাঁটা শুরু করলেন তার বড় সন্তান আব্দুর রহমান বদি। যিনি বিতর্কিত কর্মকান্ড দিয়ে বিভিন্ন সময় হয়েছেন গণমাধ্যমের শীর্ষ সংবাদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসন পান বিএনপির মনোনয়ন।

নির্বাচনের কিছুদিন আগে সেই মনোনয়ন কেড়ে নেওয়া হয়। এতে বেঁকে বসেন বদি। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এসেই নৌকা প্রতীকের জন্য শুরু করেন জোর লবিং। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনাফ সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় হন সেই পৌরসসভার প্রশাসক। এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য।

এর পর থেকেই এমপি আব্দুর রহমান বদি হয়ে ওঠেন উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য একজন রাজনীতিবিদ ও একচ্ছত্র ক্ষষমতার অধিকারি। তার কথায় চলে সব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমন কি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ইচ্ছাতেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদকের মামলায় সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন আদালত।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। শাহীন আক্তার নির্বাচিত হলেও এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে আব্দুর রহমান বদি অংশ গ্রহণ করে থাকেন। তার জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে কিনা তা নিয়ে এখনো জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।

এদিকে তারই শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজা পাললং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে।

আগামীতে আব্দুর রহমান বদির শ্যালক জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী, নাকি তার স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার অখবা তিনি নিজেই আবার মনোনয়ন পাবেন কিনা তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িঁয়েছে।

বিএনপিতে ক্লীন ইমেজের বরেণ্য রাজনীতিবিদ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর এলাকায় ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। বিএনপি দল গুছিয়ে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা তাদের দলীয় কার্যক্রমে কোন অংশে পিছিয়ে নেই।

এখানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

আরও খবর