কক্সবাজারে বেড়েছে অপরাধ, ১৫ স্পটে ছিনতাই

বাংলা ট্রিবিউন :

কক্সবাজার শহরের ৪০ স্থানে অন্তত ৫২টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে বেশির এখন অকেজো। এ কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও খুনসহ বেড়েছে নানা অপরাধ। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে জেলা পুলিশ।

২০১৮ সালে পর্যটন শহর কক্সবাজারে অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলির ৪০ স্থানে ৫২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু এসব ক্যামেরা এখন অচল। কেবল শহরের বাজারঘাটা এলাকায় তিনটি ক্যামেরা সচল রয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের হলিডে মোড় থেকে বাস টার্মিনাল-লারপাড়া ও লিংকরোড থেকে হলিডে মোড় এবং শহরের ২৯টি সড়ক, উপ-সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। এসব কাজ করতে গিয়ে সড়কের খুঁটি সরাতে হচ্ছে। এতে সিসি ক্যামেরাগুলো কোথাও ভেঙে গেছে, কোথাও অচল হয়ে পড়েছে।

২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত শহরের অপরাধ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখানে অপরাধের মাত্রা ও ধরন পাল্টাচ্ছে দিনদিন। মাদক সেবন ও পাচারকে কেন্দ্র করে কিশোর ও তরুণরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে শহরে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে সাত গুণ। সম্প্রতি দেশের প্রধান এই পর্যটন শহরে চুরি-ছিনতাই, খুন ও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

গত ১৩ এপ্রিল রাতে শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আবুল কালাম (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী। এই মাসে শহর ও আশপাশে পাঁচ জন খুন হয়েছেন। ঘটেছে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বাস টার্মিনাল, জেলগেট, আলীর জাহাল, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, সার্কিট হাউস রোড, গোলদিঘী, রুমালিয়াছড়া, কোর্ট বিল্ডিং এলাকাসহ অন্তত ১১টি স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া পর্যটন জোনের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী বিচ, ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকায় পর্যটক ও পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। এই ১৫ স্পটে প্রায়ই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬০ লাখ টাকা খরচ করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়েছিল। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল পুরো শহরের অলিগলি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গারা। প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার সেবার জন্য আন্তর্জাতিক দাতা ও এনজিও সংস্থার কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি নাগরিক শহরে বসবাস করছেন। সেসময় কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পুলিশের তথ্যমতে, কক্সবাজার শহরে ২০১৯ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে আটটি। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯টিতে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩টিতে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ৩১ জুলাই টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত এক হাজার ৪১৩ পুলিশ সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয়। পরে যেসব পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের এই অঞ্চলে কোনও সময় চাকরি করার অভিজ্ঞতা নেই। অনেক পুলিশ সদস্য ভাষা বুঝতে সমস্যায় পড়েন। তাদের সোর্সও দুর্বল। এসব কারণে অপরাধ দমনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতির নেতারা ঈদকে সামনে রেখে পুলিশের টহল বাড়ানো ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার (পরিদর্শক) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘শহরে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ১১৭ জন। এর মধ্যে গত এক মাসে সন্ত্রাসী মুন্না বাহিনীর প্রধানসহ ৬০ জন ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে ৩৫-৪০টি ছোরা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘চুরি-ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি শহরের সব শ্রেণিপেশার মানুষের এগিয়ে আসা দরকার। তাহলে একটি শান্ত শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের অপরাধ দমনে পুলিশের কয়েকটি বিশেষ টিম কাজ করছে। মাদক পাচাররোধ ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতসহ নানা ধরনের অপরাধ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘শহরে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে পড়েছে। এতে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে শহরের বাজারঘাটা এলাকার তিনটি ক্যামেরা এখনও সচল রয়েছে। সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি আমরা।’

আরও খবর