চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজারে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক মানের আইকনিক রেলস্টেশন।
চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, নাপিতখালী- এসব জায়গায় পৃথকভাবে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ৬৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে।
বর্তমানে মাটিকাটা, ব্রিজ নির্মাণ, রেললাইন তৈরি, বিদ্যুৎ লাইনসহ নানা কর্মযজ্ঞ চলছে রাত-দিন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই দেশের অর্থনীতির গতির পাশাপাশি সড়কপথে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার দূরত্ব রেলপথে অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বিদ্যুৎ লাইন, নির্মাণ ত্রুটিসহ নানা কারণে ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
তবে সময় বাড়ানো হলেও ব্যয় বাড়বে না বলে জানান দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান।
প্রকল্পের পরিচালক বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ অব্যাহত ছিল।
চলমান রয়েছে ভূমি জটিলতা নিরসনের পাশাপাশি ব্রিজ নির্মাণ, রেলট্রেক, বিদ্যুৎলাইন, মাটিকাটা ও রেললাইনগুলোতে সিগন্যালের তার বসানোসহ নানা কাজ। ইতোমধ্যে দোহাজারী এলাকার প্রায় ৩২ কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ শতাংশ।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের চলমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কাজ সম্পন্ন হবে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে শতভাগ কাজ শেষ হতে লাগতে পারে আরও ছয় মাস। এ ছাড়া নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা ত্রুটি দেখা গেলে তা সংশোধনের জন্য নিয়মানুযায়ী সে সময়ের মেয়াদ ধরা হয়েছে আরও দেড় বছর।
প্রকল্প সূত্র আরও জানায়, জানুয়ারি থেকে রেলট্রেক বা রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কক্সবাজার সদরের রামু উপজেলার পানির ছড়া বাজার এলাকা থেকে। ইতোমধ্যে তিন থেকে চার কিলোমিটার রেলট্রেক বসানো হয়েছে। প্রতি মাসে আট থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলট্রেক বা রেললাইন বসানো হবে।
এলাকার পানির ছড়া বাজারের দলির ছড়া মৌজা থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজারের দিকে লাইনটির কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই চলছে প্রকল্পের আওতাধীন মাটি কাটা, ব্রিজ নির্মাণ, লেভেলক্রসিং, কালভার্ট, স্টেশন তৈরিসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজও।
এ রেললাইন দ্রুত নির্মাণের মাধ্যমে যাতায়াত শুরু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ সারা দেশের সঙ্গে অর্থনীতি, পর্যটকদের আনাগোনাসহ নানাবিধ বিষয়ে যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি., রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি. এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক পরিবহন ছাড়াও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। সূত্র জানান, ১২৮ কিমি. রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি।
এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-