চট্টগ্রাম •
সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কমিটি।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সাধারণ মানুষের চাওয়া বিবেচনায় নিয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী লালদীঘি মাঠের পরিবর্তে বিকল্প জায়গায় বলী খেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন।
এরপ্রেক্ষিতে মেলা কমিটি লালদীঘি মাঠের পাশে রাস্তায় অস্থায়ী মঞ্চে রাতের বেলা ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে বলী খেলা আয়োজন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ বৈশাখ বা ২৫ এপ্রিল বলী খেলা হবে। এ ছাড়া ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল তিনদিন মেলা হবে। এবারের আয়োজন হবে ১১৩ তম।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় বহাদ্দারহাটস্থ সিটি মেয়রের বাসভবনে মেলা আয়োজক কমিটির মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে।
সেখান থেকেই জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজক কমিটি মাঠ সংকটের কারণে এবার বলী খেলা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘোষণা দেয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা চিন্তা করেছিলাম যদি মাঠটি তৈরি হয়ে যায় তাহলে এবারে ১২ বৈশাখ জব্বারের বলী খেলা আয়োজন করা হবে। কিন্তু মাঠের অনুমতি মেলেনি। যেহেতু মাঠের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাছাড়া যেহেতু জব্বারের বলী খেলার নির্ধারিত তারিখ ১২ বৈশাখ সেহেতু অন্য কোনো তারিখেও এটা আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবারের জব্বারের বলী খেলা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না মাঠ সংকটের কারণে’।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করা হয়েছিল লালদীঘি মাঠ থেকে। মাঠের চার পাশে সে ছয় দফার ম্যুরাল স্থাপন করা হচ্ছে। আর মাঠটিকে সাজানো হচ্ছে নতুনভাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রায় কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়ায় মাঠটি খুলে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে বলী খেলা আয়োজন না করার খবর জানাজানি হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান সাধারণ মানুষ। সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ফোরামে বলী খেলা আয়োজনের দাবি জানান তারা। এর মধ্যেই আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলে মেয়র বলী খেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বলী খেলা হবে। মাঠে না হলে বাইরে হবে। সেভাবে ব্যবস্থা করবো। প্রয়োজনে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে রাতে খেলা হবে।
তবু খেলা বন্ধ থাকবে না। মেলাও হবে। এটা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারও মেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল বেলা ১১ টায় মিটিং হবে। সেখানে সাংবাদিকদেরও আসার জন্য বলতে বলেছি। কমিটি কিছু প্রয়োজনের কথা বলেছে। তাদের বলেছি যা যা দরকার তার ব্যবস্থা হবে। কোনো সমস্যা হবে না।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জব্বাবের বলী খেলা। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলায় পরিণত হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প এবং হাতে বানানো নানা জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয়। মেলায় আসা লোকজন সেগুলো সংগ্রহ করে। এটা ঐতিহাসিক মেলা। এ মেলার ধারাবাহিকতা অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। সে জন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ হবে।
মেলা কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লাহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, বলী খেলা ও মেলা দুটো আয়োজনের বিষয়ে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। রাস্তায় অস্থায়ী মঞ্চ করে খেলা হবে এবং মেলাও হবে। অতীতে ঈদুল ফিতরের দিন খেলা হয়েছে। রমজান মাসেও হয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়েও বন্ধ ছিল না।
জানা গেছে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবকদের সম্পৃক্ত করতে বদরপাতি এলাকার তৎকালীন ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার চৌধুরী প্রচলন করেছিলেন কুস্তি প্রতিযোগিতার। ১৯০৯ সাল, ১৩১৬ বাংলার ১২ বৈশাখ লালদীঘির মাঠে যার প্রথম আসর বসে। সে কুস্তি প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়। কালের বির্বতনে পরিণত হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ঐতিহ্যে। ১৯০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে জব্বারের বলী খেলার ১১০টি আসর। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে দুটি আসর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবারও মাঠ সংকটের কারণে
শুরুতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। যা শেষ পর্যন্ত দূর হচ্ছে। এ দিকে বলী খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মেলাও। প্রতিবছর বলী খেলাকে ঘিরে তিন দিন ব্যাপি মেলা বসে লালদীঘি মাঠে। যা আশপাশের রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-