তারেকুর রহমান •
কক্সবাজারে খুনিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছাত্র-ব্যবসায়ী, যুবক কিংবা বৃদ্ধ। কয়েকদিন পর পর তাজা প্রাণগুলোকে বলি হতে হচ্ছে হত্যাকারীদের হাতে।
কক্সবাজারে এখন রক্তের হুলি খেলা চলছে। দিন-রাত এভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে সাধারণ মানুষ। এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাথাব্যথা নেই বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবির ঝড় তুলছেন নেটিজেনরা।
দুই সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারে ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৮টিরও বেশি। এরমধ্যে গত ৫ দিনে ৭ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়া খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার নেই।
সমানভাবে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও চলছে নিয়মিত খুনাখুনি। ঘুমন্ত বা জীবিত অবস্থায় স্ত্রী স্বামীকে কিংবা স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করা ক্যাম্পে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার মতো।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বছরের পর বছর বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি হচ্ছে বলে সচেতনের মহলের দাবি।
সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিতিরা বলেছেন, সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনেকটা অকার্যকর হতে চলেছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিদ্ধান্ত সমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে সভায়।
গত সোমবার সকালে সদরের চৌফলদণ্ডী ব্রিজের নিচ থেকে মো. সায়েম (২২) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
একই সময়ে কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে সেহেরি খেয়ে নামাজের জন্য বের হয়ে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হয় তারেকুল ইসলাম (১৭) নামের আরেক যুবক।
সে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ওয়াহেদুর পাড়া এলাকার মৃত ছগির আহমদের ছেলে। সোমবার ভোররাতে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ি এলাকায় তাকে এরপর ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।
৪ এপ্রিল পিএমখালীতে ফুটবল খেলার প্রাইজমানির টাকার ভাগবাটোয়ারার জের ধরে মো. জাহাঙ্গীর (২২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। সে পিএমখালী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দুল হকের ছেলে। সোমবার বিকালে তাকে ছুরিকাঘাত করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তার মৃত্যু হয়।
CHECK THIS OUT
Mgid
Mgid
রাতে পেটের আকার কমিয়ে ফেলুন সহজ একটি কৌশল
Green Coffee
৭ এপ্রিল সদরের পিএমখালীতে পানি সেচ প্রকল্পের বিবাদকে কেন্দ্র করে মোরশেদ আলী ওরফে মোরশেদ বলী (৩৮) কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ইফতারের বাজার করার জন্য চেরাংঘর এতে কক্সবাজার জেলা আ. লীগের বাজারে গেলে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোরশেদের ওপর হামলে পড়ে। প্রায় ২০ মিনিট উপর্যুপরি আঘাতের পর হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
৮ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মইক্কাঘোনা পাহাড়ি এলাকায় মোবাইলে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ ইউনুছ (৪০) নামের এক যুবককে মেরে ফেলা হয়েছে।
ঠিক এভাবে খুনের কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে কক্সবাজারে। কিন্তু পরিস্থিতি দিন থেকে দিন ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনালের আমগাছ তলা এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আবুল কালাম (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এই প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
তবে পুলিশ বলছে, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সচেতন মহল বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সোচ্চার থাকলে কোনোদিন একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে না। সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজারের একাধিক হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। দিন-রাত খুন খারাবি থেকে জেলাবাসীকে নিস্তার পেতে হলে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সোচ্চার ও সজাগ থাকতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে বাকি অপরাধীরা সচেতন হয়ে যাবে।
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে কক্সবাজারে। এটি সত্যি দুঃখজনক।
কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, কক্সবাজারের অবস্থা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। কক্সবাজারে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে রিদুয়ান ও মোরশেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি ঘটনায়ও যারা জড়িত তাদের বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সময়ে গত ১২ দিনে ১৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারে, তা খুবই দুঃখজনক। এদিকে ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও অপরাধীকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান সর্বদা অব্যাহত রয়েছে। যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয় সেখানেই দ্রুত অভিযানে পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-