এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া •
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পারিবারিক শত্রুতার জেরে আপন চাচা কতর্ৃক নুরুল কাদের নামে চারমাস বয়সী এক শিশু অপহরনের ১২ ঘন্টা পর তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
চকরিয়া থেকে অপহরণ করে চট্রগাম শহরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাসের ষ্টাফ ও যাত্রীদের সহায়তায় গত বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে কর্ণফূলী থানা পুলিশ ওই শিশুকে উদ্ধার করে।
এ সময় অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি টিম চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা গিয়ে উদ্ধার হওয়া শিশু ও অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের নিয়ে আসে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাতে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের ডেইঙ্গাকাটা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় অপহৃত হয় শিশু নুরুল কাদের।
এ ঘটনায় অপহৃত শিশুর মা জোসনা আক্তার বাদি হয়ে বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে আসামী করে চকরিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন।
পরে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে চকরিয়া থানা পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রুজু করে। এদিন বিকালে অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে আদালতের কাছে সোপর্দ করে পুলিশ।
মামলার আসামীরা হলেন চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের ডেইঙ্গাকাটা এলাকার আলী হোসেনের ছেলে ও অপহৃত শিশু বড় চাচা মো.আল আমিন (২৬), চট্টগ্রামের পাচঁলাইশ থানার ষোলশহর এলাকার মো.ফারুকের ছেলে মোহাম্মদ আরিফ (২৪) ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ হাতিয়ার মাগুরাবাজার এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে নুরুন্নবী (২৫)।
মামলা বাদি জোসনা আক্তার বলেন, গত ২৯ তারিখ রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে আমি ও আমার শ্বাশুড়ি যার যার রুমে ঘুমিয়ে পড়ি। এ সময় আমার চার মাস বয়সি শিশু সন্তান নুরুল কাদেরও ঘুমিয়ে পড়ে। ওইরাতের কোন একসময় আমার ভাসুর আল আমিনের নেতৃত্বে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা সুকৌশলে বাড়ির দরজা খুলে আমার শিশু সন্তানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ভোর রাতের দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে দেখি পাশে আমার সন্তান নেই। পরে বাড়ির চারপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও আমার সন্তানের সন্ধান না পেয়ে প্রতিবেশিদের কাছে ঘটনাটি জানাই।
তিনি আরও বলেন, পরদিন দুপুরের দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পাই আমার শিশু সন্তান নুরুল কাদেরকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রামের কর্ণফূলী থানা পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে বলে জানতে পারি।
তাৎক্ষনাত বিষয়টি আমি চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করি। পরে চকরিয়া থানার পুলিশের একটি টিম কর্ণফূলী থানায় গিয়ে আমার অপহৃত শিশু নুরুল কাদের ও অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে থানায় নিয়ে আসে।
যাত্রীবাহি হানিফ পরিবহণের সুপার ভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, বুধবার সকালে চকরিয়া থেকে হানিফ পরিবহণের একটি বাসে করে একটি শিশুসহ তিনজন যাত্রী চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। এ সময় শিশুটি খুবই কান্নাকাটি করছিলো।
বিষয়টি ওই গাড়ির যাত্রীদের সন্দেহ হলে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি শিশুটি কার? তখন তিনজনের মধ্যে থেকে আল-আমিন নামে এক ব্যক্তি বলেন এটা আমার সন্তান। শিশুর মা কোথায জানতে চাইলে তখন তিনি উল্টোপাল্টা উত্তর দিতে থাকে। এতে আমাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। পরে তাদের কর্ণফূলী থানায় নিয়ে যাই। এ সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহৃত শিশুটি আল-আমিনের ছোট ভাইয়ের সন্তান। পারিবারিক শত্রুতার জেরে চারমাস বয়সি ওই শিশুকে অপহরণ করেছে তারা।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, পারিবারিক শত্রুতার জেরে শিশুর আপন বড় চাচা চার মাস বয়সি শিশু নুরুল কাদেরকে অপহরণ করে। পরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা পুলিশ বাসের সুপারভাইজার ও যাত্রীদের সহায়তায় ওই শিশুকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় অপহৃত শিশুর মা জোসনা আক্তার বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়েরর পর বৃহস্পতিবার বিকালে অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-