ক্লুলেস হত্যার মূল আসামীকে গ্রেফতার করলো শহর পুলিশ ফাঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক •


কক্সবাজার শহরের আলোচিত ক্লুলেস আনোয়ার হত্যা মামলার পলাতক মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ি। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি হলেন বিজিবি ক্যাম্পের মল্লিক পাড়ার স্বপন মল্লিক ছেলে সুজন মল্লিক (২৩)। দীর্ঘ ১৭ মাস ক্লু বিহীন এই মামলা তদন্ত করে অবশেষে মূল আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো.আনোয়ার হোসেন।

২০২০ সালের ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় মেডিপ্লাস পেস্ট কোম্পানীতে কর্মরত আনোয়ারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর পালিয়ে যায় সুজন মল্লিক। ওইদিন নিহতের ভাই আতোয়ার হোসাইন বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সদর মডেল থানার থেকে মামলাটির তদন্ত পায় শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. আনোয়ার হোসেন।

দীর্ঘদিন ধরে মামলার ঘটনাস্থল শহরের বিজিবি ক্যাম্প , মল্লিকপাড়া, সিকদার পাড়া, বড়–য়া পাড়া, লাহার পারা, ইসলামাবাদ, সাহিত্যিকা পল্লী, পল্ল্যাইনাকাটা ও আশপাশ এলাকায় ছদ্মবেশ ধারণ করে, ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত লোকজনের তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করেন।

মামলার ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করেন।

এই মামলাটি যেহেতু একটি ক্লুলেস মামলা এবং মামলার এজাহারনামীয় আসামী অজ্ঞাতনামা। সেক্ষেত্রে মামলা সংক্রান্তে কোন নির্দোষ ব্যক্তি হয়রানী না হয় এবং প্রকৃৃত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

অতঃপর আসামী সুজন মল্লিক (২৩) কে গত সোমবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ৮ টায় বিজিবি ক্যাম্প এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন।

শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামী সুজন মল্লিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে এবং অপর আসামীর নামসহ বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করেন। এরপর আসামী সুজন মল্লিক কে গত মঙ্গলবার খ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী সুজন মল্লিক বিজ্ঞ আদালতে মামলার ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ও অপর আসামীর নাম প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, আসামী সুজন মল্লিক জানায় ঘটনার দিন সন্ধ্যা অনুমান ৬টার সময় সে ও অপর আসামি দুজনে গাঁজা (মাদক) সেবন করার পর তারা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে এবং সেই উদ্দেশ্যে বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিএডিসি অফিসের সামনের ফাঁকা রাস্তার দিকে কোমরে ২ টি ধারালো ছোরা নিয়ে অগ্রসর হয়।

নিহত আনোয়ার হোসেন বাস টার্মিনাল থেকে চৌধুরীপাড়া পায়ে হেঁটে আসতেছিল তার বাম হাতে কালো রংয়ের ব্যাগ ও একটি স্মার্ট ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার পাশ দিয়ে আসছিলো।

আসামিরা দুজনে নিহত আনোয়ারকে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় মোবাইলটা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিবে। সেই উদ্দেশ্যে আসামি সুজন মল্লিক ও অজ্ঞাতনামা অপর আসামি তাদের হাতে থাকা ধারালো ছোরা নিহত আনোয়ারকে ভয়ভীতি দেখায় এবং বলে যে মোবাইল ও মানি ব্যাগ দিয়ে দিতে।

ওইদিন ছিনতাইয়ের শিকার আনোয়ার ছিনতাইকারীদের বলে যে ‘আমার কাছে আমার অফিসের ফোন ও আমার মানি ব্যাগে ৭০০ টাকা আছে। এটা নিয়ে নিলে বাকি মাসের ৭ দিন আমার বাচ্চা আমি আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকবো। আমি আর আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকলেও কষ্ট নাই কিন্তু বাচ্চাটা না খেয়ে থাকলে নির্ঘাত মারা যাবে।’ ওইদিন বার বার ছিনতাইকারীদের দয়া করার কথা বললেও আসামিরা আনোয়ারের কাছ থেকে জোর করে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করলেও বাধা দেয় এবং আসামি সুজন মল্লিক ও অপর আসামি নির্দয় হয়ে আনোয়ারের শরীরে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। ওই সময় আনোয়ার মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও তার কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ তার কাছ থেকে ছিনতাই করতে পারেনি। গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় খালি হাতে কোম্পানির দেওয়া মোবাইল ও মানিব্যাগে রক্ষিত ৭০০ টাকা বাঁচানোর জন্য আসামীদের সাথে লড়াই করেছেন। পরে ওইদিন আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসলে আসামীরা পালিয়ে যায়।

এদিকে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ক্লুলেস এই হত্যা মামলার যেহেতু মূল আসামী গ্রেফতার হয়েছেন এই অন্যান্য পলাতক আসামীরা গ্রেফতার হবেন।
ওসি আনোয়ার বলেন, আমাদের শহর পুলিশ ফাাঁড়ির নিয়মিত অভিযান চলমান আছে।

আরও খবর