বিশেষ প্রতিবেদক •
সাগর পথে নৌকায় করে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। তাদের অনেকের বিয়ে ঠিক হয়েছে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে। এছাড়া অনেক নারীর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তাই এবার বাংলাদেশ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালদের মাধ্যমে চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে নামিয়ে পালিয়ে যায়।
গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত নারী-পুরুষসহ ১৪৯ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৫ জন নারী, পুরুষ ৫১ জন ও ২৩ জন শিশু রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাছিমা আকতার (১৭) বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার পাসপোর্ট করার কোনো সুযোগ না থাকায় স্বামী সাগর পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রথম দফায় দালালদের ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি।
বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী খদিজা বেগম বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে, কিন্তু গত সাত বছর ধরে স্বামী মালয়েশিয়ায় থাকেন। আট বছরের এক মেয়েকে নিয়ে মালয়েশিয়া নেওয়ার চেষ্টা করেন আমার স্বামী। ট্রলার দুর্ঘটনায় আমি প্রাণে বাঁচলেও আমার মেয়েটিকে বাঁচাতে পারিনি। তার সঙ্গে এক ননদকেও হারিয়েছি আমি।
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের ফাতেমা বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করে স্বামী মালয়েশিয়ায় চলে যায়। এখন আমাকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালদের মাধ্যমে সব কিছু ঠিক করেছিলেন। স্বামীর কথায় আমি বাধ্য হয়ে ট্রলারে উঠি।
এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাহির করে আনেন দালাল চক্রের সদস্যরা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোনাদিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
মহেশখালী কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ কামাল জানান, মালয়েশিয়া পৌঁছেছে বলে এদের সোনাদিয়া দ্বীপ নামিয়ে দেয় দালাল চক্রের সদস্যরা। এদের সোনাদিয়া দ্বীপে নামিয়ে দেওয়ার পর দালালরা বোট নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা সোনাদিয়া দ্বীপে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করলে তাদের সন্দেহ হয়, পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এদিকে সোনাদিয়া থেকে রাত ৮টার দিকে ৩টি বোটে করে তাদের কক্সবাজার ৬ নং ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ। রাত ২টার দিকে কক্সবাজার ৬ নং ঘাটে পৌঁছায় রোহিঙ্গাদের বহনকারী তিনটি বোট। সেখান থেকে বাস করে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের উদ্দেশে ৩টি বাসে করে রওনা দেন তারা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-