গায়েহলুদের দিন মারা গেলো মেয়েটি

ডেস্ক রিপোর্ট •

বখাটের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরিবার। সে অনুযায়ী গায়েহলুদ ও বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়েটিকে কুপিয়ে জখম করে বখাটে। অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গায়েহলুদের দিন মারা গেলো মেয়েটি। বিয়েবাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। এদিন বিকালে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরপালং এলাকার নুরুজ্জামান মাদবরের মেয়ে কাকলি আক্তারের সঙ্গে। কাকলি আক্তারকে (১৮) গত বৃহস্পতিবার রাতে কুপিয়ে জখম করে স্থানীয় এক বখাটে। রবিবার (২০ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু ও দাফনের বিষয়টি জানিয়েছেন বড় ভাই ফারুক মাদবর।

পরিবার জানিয়েছে, জাহিদুল ইসলাম নামে এক বখাটে বিয়ে করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে কাকলিকে কুপিয়ে জখম করেছে। ঘটনার তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। কাকলি শরীয়তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। রবিবার তার গায়েহলুদ এবং সোমবার বিয়ের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গায়ে হলুদের দিন তাকে দাফন করেছেন পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশাভোগ গ্রামের মনোহর মোড় সংলগ্ন আপন খন্দকারের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন জাহিদুল। শরীয়তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (২২) কাকলিকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। জাহিদুল শরীয়তপুর পৌরসভার কাশাভোগ এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে। কাকলিকে বিয়ে করার জন্য পরিবারের কাছে প্রস্তাব দেয় জাহিদুল। কিন্তু এতে পরিবার রাজি হয়নি। কয়েকদিন আগে কাকলির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় জাহিদুল।

বৃহস্পতিবার রাতে জানালা দিয়ে কাকলির ঘরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা জাহিদুলকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে কাকলিকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার ভোরে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

প্রতিবেশী আলেয়া বেগম বলেন, মেয়েটি খুব ভালো ছিল। এভাবে লাশ হয়ে মেয়েটি বাড়িতে আসবে কখনও কল্পনাও করিনি। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।

ফারুক মাদবর বলেন, আজ আমার বোনের গায়েহলুদ হওয়ার কথা ছিল। সোমবার বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল। বোন আজ লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলো। বিকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছি।

তিনি বলেন, জাহিদুল আমার বোনকে সবসময় উত্ত্যক্ত করতো। তাই অন্যত্র বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার হাত থেকে বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। আমি তার ফাঁসি চাই।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, কুপিয়ে জখমের ঘটনায় কাকলির ভাই ফারুক মাদবর হত্যাচেষ্টার মামলা করেছিলেন। কাকলি মারা যাওয়ায় ওই মামলা এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। মামলার একমাত্র আসামি জাহিদুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহিদুল যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তাই পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখাবো।

আরও খবর