জাহাজে কী হয়েছিল বাংলাদেশকে জানাবে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক •

ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে কারা হামলা চালিয়েছে’—এর খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশকে জানাবে রাশিয়া। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে ‘নোট ভারবাল’ দিয়ে জানিয়েছে যে তারা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে। হামলার ঘটনায় রাশিয়া দুঃখ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া বলছে, হামলা তারা করেনি।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “তবে যুদ্ধের যে ধোঁয়াশা থাকে, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘ফগ অব ওয়ার’, সেখানে কোন পক্ষ, কার কাছে কী আছে, কে কোথা থেকে কী করছে—তা নিশ্চিত করা খুব কঠিন। তবে রাশিয়ানরা আশ্বাস দিয়েছে, তারা আমাদের জানাবে, ঠিক কী হয়েছিল। ”

‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের মাইকোলেইভ নৌবন্দরে পৌঁছে। পরদিন সকালেই ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। ফলে বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে আটকা পড়ে ওই জাহাজ। গত বুধবার রাতে জাহাজটিতে ‘রকেট হামলা’ হয়। এতে জাহাজের তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস এক ফেসবুক বার্তায় ওই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করে।

জাহাজে হামলা নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এখন ওদের অগ্রাধিকার ভিন্ন আছে। তারা এখন ভূখণ্ড রক্ষায় বেশি ব্যস্ত। সুতরাং আমাদের জিজ্ঞাসার সব ধরনের জবাব দেওয়া তাদের পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। ’

পররাষ্ট্রসচিব জানান, বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিককে উদ্ধারের পর মলদোভা হয়ে রোমানিয়ায় নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে হাদিসুর রহমানের মরদেহও রয়েছে।

সচিব আরো জানান, যুদ্ধ শুরুর পর ৬০০-এর বেশি বাংলাদেশি ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে ঢুকেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, আর ১০০-এর মতো বাংলাদেশি ইউক্রেনে আছে। তবে তাদের অনেকেরই হয়তো ইউক্রেনেই পরিবার আছে বা ইউক্রেনীয় স্ত্রী আছে। তারা হয়তো এতটা ঝুঁকিতে নেই। ঝুঁকিতে যারা ছিল তারা মোটামুটি সবাই বেরিয়ে গেছে। ’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমরা জেনেছি কিছু কিছু স্থানে কিছু ভারতীয় আছে। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসপ্রধান যাঁরা আছেন বা যাঁরা সেটি সমন্বয় করছেন, তাঁদেরও আমরা অনুরোধ করেছি, দু-চারজন যদি বাংলাদেশি থাকেন তাঁদের যেন তাঁরা সাহায্য করেন। ’

নিষেধাজ্ঞার কারণে সুইফটব্যবস্থা থেকে বাদ পড়তে যাওয়া রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংককে আপাতত তাদের সঙ্গে লেনদেন না করতে বার্তা পাঠিয়েছে। এতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্রসচিবের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রূপপুর প্রকল্পে কতটা পড়বে? জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এখনো স্পষ্ট হয়নি সব কিছু। এখনো নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনগুলো চলছে।

পুরোপুরি প্রভাব কী হয়, সেটি নিয়েও আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। বৃহস্পতিবারও আমরা বৈঠক করেছি সব অংশীদারকে নিয়ে। পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে আরো কিছু বৈঠক করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পণ্য ও সেবা আমদানি রপ্তানিকারক, আমাদের যে প্রজেক্টগুলোতে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা আছে সেখানে সেখানে লেনদেনের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন মহলে কথা বলছি, নিজেদের মধ্যে। কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেগুলোও আমরা নির্ধারণ করব আগামী দিনে। ’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এই মুহূর্তে সমস্যা হবে না মনে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতির ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। ভবিষ্যতে যদি আরো ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে বা সুইফটের নিষেধাজ্ঞা আসে, অথবা বড় যে কম্পানিগুলো আছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা যদি সরাসরি আসে, তখন হয়তো জটিলতা আসতে পারে।

আরও খবর