তদন্তের দাবী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের

কক্সবাজারে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আ.লীগে বেড়েছে কোন্দল

সৈয়দুল কাদের •

সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারে তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য ত্যাগ শিকার করা অনেকেই নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বিভক্তি দেখা দিয়েছে ওয়ার্ড পর্যায়েও। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কক্সবাজারে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল ক্রমশঃ তীব্র আকার ধারণ করেছে। কিছু সিনিয়র নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের একেক নেতা সমর্থন দেওয়ায় দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে সর্বত্র।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সোনা আলী। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুর হোসেন। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।

এতে একজন সিনিয়র নেতার ইন্ধনে নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। টেকনাফ সদরে যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করেছেন তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার সাথে আর কেউ নেই। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগর বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। ফলে দলীয় কোন্দলে জর্জরিত টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।

মহেশখালীর মাতারবাড়িতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম আবু হায়দার বিজয়ী হলেও নির্বাচন করেছেন একাধীক বিদ্রোহী প্রার্থী। ওই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যেই কাজ করেছেন একজন সিনিয়র নেতা। হোয়ানক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কাজ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। যার ফলে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। এতেও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যেই কাজ করেছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

মহেশখালীতে নির্বাচন হওয়া প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জোর প্রচারণা চালালেও অন্য নেতারা করেছেন প্রকাশ্যে বিরোধীতা।
ফলে তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। পেকুয়া উপজেলার ৭টি ও চকরিয়া উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সাংসদ। রামু উপজেলায় একই ভাবে দলীয় প্রার্থীর বিরোধী করেছেন স্থানীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যাপক প্রচারণা চালালেও এই দুই উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কয়েকজন প্রার্থী স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছেন।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নৌকা প্রতীক পরাজিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষনেতা ষড়যন্ত্র করেছেন। যার ফলে নিশ্চিত বিজয় হাত ছাড়া হয়েছে আওয়ামী লীগের। দলে এরা ঘাপটি মেরে আছে দলের ক্ষতি করতে। বিষয়টি তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে অনেক রহস্য।

মহেশখালীর ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাস্টার এনামুল করিম জানিয়েছেন, ছোট মহেশখালীতে নৌকা প্রতীক হারাতে কারা কাজ করেছেন তারা চিহ্নিত। সাংসদ ছাড়া কেউ নৌকার পক্ষে কাজ করেনি। একেক জন একেক প্রার্থীকে ইন্ধন দিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এসব নেতারা নৌকা ভোট না দেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন দলের মনোনয়ন চুড়ান্ত করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের পক্ষে দলের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। এর বাইরে আর বলার কিছু নেই।

আরও খবর