উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় ৮০ শতাংশ নর-নারী চাকুরীচ্যুত

বিশেষ প্রতিবেদক :

সীমান্তের নাফ নদী, পাহাড় জঙ্গল বে‌ষ্টিত,আঁকা বাঁকা গিরিপথ উপত্যকা পার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী পুরুষ শিশু আশ্রয় নেয় উখিয়া টেকনাফের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনাঞ্চলে।

রোহিঙ্গাদের সেবায় প্রায় দেড় শতাধিক আন্তর্জা‌তিক ও দেশীয় সেবাসংস্থার বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্টান কাজ শুরু করে ক্যাম্পে। লোকবল সংকটের কার‌ণে এসময় শত শত স্থানীয়দের চাকুরী দি‌য়ে রো‌হিঙ্গা‌দের সেবা দেয়। ফলে রো‌হিঙ্গা বস‌তি এলাকায় একটি উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্বার্থান্বেষী ‌কিছু কুচক্রী এনজিও সংস্থা তাদের আত্মীয় স্বজনদের চাকু‌রি দি‌য়ে স্থানীয়দের গনহা‌রে ছাটাই শুরু ক‌রে। এসময় রো‌হিঙ্গা প্রত‌্যাবাসন ক‌মি‌টির ব‌্যানা‌রে সর্বস্ত‌রের মানুষ স্থানীয়‌দের চাকু‌রি নি‌শ্চিত করার দাবী জানা‌লেও অজ্ঞাত কার‌ণে তা বাস্তবায়‌নে আ‌লোর মুখ দে‌খে‌নি। বর্তমানে এন‌জিওরা ছাটাই অ‌ভিযা‌ন আরও জোরদার ক‌রে‌ছে। মানা হ‌চ্ছেনা জনপ্রতি‌নি‌ধি‌দের সুপা‌রিশ।

পালংখালী ইউ‌নিয়‌নের লম্বা‌বিল গ্রা‌মের বিধবা আ‌ছিয়া খাতু‌নের মে‌য়ে ‌মিনারা(১৮) স‌বেমাত্র এসএস‌সি পাস ক‌রে এক‌টি এন‌জিওতে ১৮হাজার টাকা বেত‌নে চাকু‌রি নি‌য়ে‌ছিল। গত ৩মাস আ‌গে কোন অজুহাত ছাড়া তা‌কে অব‌্যাহ‌তি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। মিনারা জানায়, তার স্থ‌লে এন‌জিও কর্মকর্তার নিকট আত্মীয়‌কে চাকু‌রি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এভা‌বে অসংখ‌্য নারী পুরুষ বিনা কার‌নে চাকু‌রি হা‌রি‌য়ে‌ছে।

রো‌হিঙ্গা প্রত‌্যাবাসন ক‌মি‌টির নেতা সা‌বেক উপ‌জেলা চেয়ারম‌্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী ব‌লেন, ১১লাখ রো‌হিঙ্গার ভা‌রে উ‌খিয়া টেকনাফ এলাকা বিপর্যস্থ। তাই এখানকার বেকার শি‌ক্ষিত যুবক যুব‌তির চাক‌রি নি‌শ্চিত কর‌তে হ‌বে। না হ‌লে বৃহত্তর জনসাধারন‌কে সা‌থে নি‌য়ে এন‌জিও‌দের অপকার্যক্রম বন্ধ করা হয়।

এনজিওর নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় চাকুরীচ্যুত যুবক আবছার উদ্দিন (২৩) জানায়, তার যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতার বলে এনজিওতে চাকুরি হ‌য়ে‌ছিল। ৩ মাস যে‌তে না‌যে‌তেই তা‌কে ব‌হিস্কার করা হয়। সে সাংবা‌দিক‌দের জানান, এন‌জিওরা তা‌দের দে‌শের বা‌ড়ি থে‌কে চাকু‌রি অ‌যোগ‌্য লোক‌দের এ‌নে তা‌দেরকে বি‌ভিন্ন প‌দে নি‌য়োগ প্রদান ক‌রে।

এ বিষ‌য়ে প্রতিবাদ কর‌লে এন‌জিও কর্মকর্তা ব‌লেন, তোমার পারফ‌র্মেন্স ভাল নয়। তাই উর্ধতন কতৃপ‌ক্ষের নি‌র্দেশে তোমা‌কে বাদ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

রো‌হিঙ্গা প্রত‌্যাবাসন ক‌মি‌টির একা‌ধিক নেতা স্থানীয় সাংবা‌দিক‌দের নাম প্রকাশ না করার শ‌র্তে ব‌লেন, এন‌জিও কর্মকর্তারা চাকু‌রি দেওয়ার না‌মে মোটা অংকের টাকা হা‌তি‌য়ে নি‌চ্ছে। ত‌বে টাকা লেন‌দেনের বিষয়‌টি গোপন রাখার শর্ত সা‌পে‌ক্ষে চাকু‌রি দেওয়া হ‌চ্ছে।

এনজিও সংস্থারা অ‌নেক‌কে একদিনের নোটিশে চাকুরীচ্যুত কর‌ছে। এসব কর্মহীন যুবক‌রা এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। আ‌র্থিক অনট‌নে চল‌ছে তা‌দের জীবন। কারণ তাদের চাকুরী বা রো‌জি‌রোজগা‌র আর কো‌নো পথ নেই। এতে ক‌রে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছে। চাকুরী হা‌রি‌য়ে বেকার অবস্থায় হন্ন হয়ে ঘুরছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গার ভারে জর্জরিত পালংখালী ইউনিয়ন এলাকা। মানুষ রোহিঙ্গা কর্তৃক নির্যাতিত।

রো‌হিঙ্গা‌রা স্থানীয়‌ এলাকায় গুম হত‌্যা ধর্ষণ, চু‌রি ডাকা‌তি সহ নানা অপরা‌ধের সা‌থে জ‌ড়িত। দিনদুপু‌রে যে‌কোন অপরাধ কর‌তে তারা দ্বিধা ক‌রেনা। তা‌দের এসব বেআই‌নি কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসন‌কে আরও ক‌ঠোর অবস্থা‌নে থাক‌তে হ‌বে।

আরও খবর