ওমর ফারুক হিরো •
কক্সবাজারের দর্শণীয় স্থান প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দখল-দূষণে হুমকির মুখে। গত ২৩ বছর আগে দ্বীপটি পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাস্তবায়ন হয়নি কোন পরিকল্পনা। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়বে বলে ধারণা পরিবেশবিদদের।
প্রবাল পাথর বেষ্টিত স্বচ্ছ নীল জলরাশির ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমন পিপাসুদের কাছে আর্কষণীয় স্থান। এই দ্বীপের প্রকৃত বাসিন্দা ৯ হাজার হলেও পযর্টন মৌসুমে প্রতিরাতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি লোক আসা-যাওয়া করে।
১৯৯৯ সালে এ দ্বীপকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া বা প্রতিবেশগতভাবে সঙ্কটাপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দ্বীপকে দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দীর্ঘ ২৩ বছরে তেমন কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ও অবৈধ দখলের কারণে এই দ্বীপ আজ ঝুঁকিতে।
সরেজমিনে সেন্টমার্টিন গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াড়ি সহ পুরো দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য চিপসের প্যাকেট, আচারের প্যাকেট, পলিথিন, ক্যান, প্লাষ্টিক চায়ের কাপ, পানির বোতল, ডাবের খোসা, স্ট্র, খাবারের প্যাকেট, মাছ ধরার ছেড়া জাল, নাইলন দড়ির টুকরোসহ বিভিন্ন অপচনশীল বর্জ্য।
এছাড়াও সেন্টমার্টিনের শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁর সাথে যোগ হয়েছে গৃহস্থালির ফেলা বর্জ্য। প্রায় বেশিরভাগ হোটেলে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এসব বর্জ্যর পাশাপাশি সমুদ্রের পানিতে পড়ছে পর্যটকদের ব্যবহৃত নানা প্লাষ্টিক।
এছাড়া যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইট-কনক্রিটের রিসোর্ট ও বহুতল ভবন। বাণিজ্যের স্থানে পরিণত হওয়া এই দ্বীপে কনক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের উপর বিধি-নিষেধ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষা এখন সময়ের দাবী হওয়ায় নানা দিক নির্দেশনামূলক কথা বলেন সচেতন লোকজন, পর্যটক ও পরিবেশবিদরা।
সেন্টমার্টিনে বেড়াতে আসা সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া জানান, দ্বীপের সৌর্ন্দয্য রক্ষার্থে ময়লা-আবর্জনা প্রতিরোধ করে জীববৈচিত্র রক্ষা এখন সময়ের দাবী। নয়ত এই দ্বীপ রক্ষা করা যাবেনা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সহ দ্বীপ নিয়ে কাজ করা সংস্থার কর্মকর্তাদের কাযক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেন্টমার্টিন যেভাবে সাজানোর কথা ছিল সেভাবে সাজানে হয়নি। দখল আর দূষণে এই দ্বীপ হারিয়েছে নিজস্ব রূপ। সৃষ্টি হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি। শুধু কথায় নয় এই দ্বীপ রক্ষার্থে আন্তরিক প্রচেষ্টা দরকার।
সেন্টমার্টিনে বেড়াতে আসা পর্যটক রাফিদুল হাসান বাপ্পি জানান, স্বচ্ছ জ্বলের দ্বীপ দেখতে এসে পানিতে যখন নোংরা প্লাস্টিক আর আবর্জনা দেখা যায় তখন খুব খারাপ লাগে। এছাড়া দখলবাজদের থাবা এখানেও দেখা যাচ্ছে। এটি প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নয়। প্রশাসন চাইলে এই দ্বীপকে পর্যটক বান্ধব করতে পারে।
সেন্টমার্টিনের পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মী আব্দুল হামিদ জানান, ভ্রমনে আসা পর্যটক ও প্রভাবশালী দখলবাজরা কোন কথা পাত্তা দেয় না। পরিবেশ অধিদপ্তর একা দ্বীপ রক্ষা করতে পারবে না। প্রশাসনের কঠোরতা জরুরী।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার সহ দ্বীপ রক্ষায় একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। কিন্তু কোনভাবে কাজে আসছে না। দ্বীপের চারদিকে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। যার কারণে দ্বীপের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। মানব সৃষ্ট পরিবেশ ধ্বংশের কারণে দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
সেন্টর্মাটিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, অসচেতনতার কারণেই সেন্টমার্টিন দূষিত হচ্ছে। তবে আবর্জনা অপসারণের ১ গ্রহণ করা হচ্ছে। দখলের প্রসঙ্গে তিনি জানান এসব দখল হয়েছে আরো প্রায় ১৫-২০ বছর আগে।তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিনিয়ত দখল প্রকৃয়া চলছে সেন্টমার্টিনে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিভিন্ন দুষণের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের চাপে দ্বীপে অতিরিক্ত বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে। এর মধ্যে একবার ব্যবহৃত প্লাষ্টিকের প্যাকেট ও বোতল সৈকত জুড়ে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে। এজন্য অন্তত পর্যটন এলাকা গুলোতে একবার ব্যবহৃত প্লাষ্টিক, পলিথিন ও চিপসের প্যাকেট ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষায় গত ৪ জানুয়ারী সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল বা মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া
সেন্টমার্টিনের ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে পরিকল্পনাসহ ১৩ টি সুপারিশ বাস্তবায়নে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়। তাই প্রশাসনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির পাশাপাশি দ্বীপকে বাঁচিয়ে রাখার আহবান সকলের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-