কক্সবাজারে নব্য প্রতারক জীবন দম্পতি: প্রলোভনে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা

 

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের কলাতলী রােডে অবস্থিত হােটেল সুইট সাদাফের জেনারেল ম্যানেজার শহিদুল মাওলা জীবন ও তার স্ত্রী লুতফুর নাহার শিল্পী দীর্ঘ দিন ধরে পর্যটকদের টার্গেট করে ভয়াবহ প্রতারণা করে আসছে।

এই দম্পতি কক্সবাজারে অবস্থান করার সুবাদে গড়ে তুলেছে ভয়ংকর। আস্তানা। এতে দেশবিদেশের ভ্রমণবিলাসীমানুষের আনাগােনা বেশি। গড়ে তুলে নান্দনিক হােটেল মােটেল। তার হােটেলটি বর্তমানে মাদক কারবারি, কালােবাজারি, প্রতারকদেরও আশ্রয়স্থল।

এ প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযােগের পাহাড় ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ফেইসবুকেও। অনেকেই এদের খপ্পরে পরে হয়েছেন নিঃস্ব। ভয়ংকর এই প্রতারক দম্পতি শক্তিশালী হওয়ায় অনেকে মুখ খুলতে সাহস পায়না।

তাদের প্রতারণার হাতকে শক্তিশালী করতে এরা সখ্যতা গড়ে তুলেছেন সমাজের রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিদের সাথে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতারণার কৌশল হিসেবে এরা বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ, বিদেশে পাঠিয়ে চাকরি নিশ্চিত করনের প্রতিশ্রুতি এমনকি স্টুডেন্ট ভিসায় লােক পাঠানাের মত চটকদার প্রলোভন দিয়ে থাকেন।

এ দম্পতির প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হয় এমনকি প্রাণনাশের হুমকি পেতে হয় ভুক্তভোগীদের।

এমনই এক ভুক্তভোগীর শাহ রিয়দ মাহমুদ রাফি।একইস্থানের বাসিন্দা এবং পারিবারিক বন্ধন থাকার সুবাদে শাহরিয়াদের পরিবারের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। এ সুযোগে বুঝে তাকে তুরস্কে পাঠানাে প্রলােভন দেখিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এই দম্পতি।

পরে অনেক খোঁজাখুজির পর তাদের কাছে ভিসা/টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে অনেক লাঞ্চনা ও প্রাণনাশের হুমকি পেতে হয়েছে। এতে নিরুপায় হয়ে তাকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

এ ব্যপারে তিনি নারায়ণগঞ্জের শিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন যার যার নং ১২৩১।

এ নিয়ে একাধিক ভুক্তভোগিরা তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানা আদালতে একাধিক সাধারণ ডায়রি ও মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভােগী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কতিপয় হােটেল ম্যানেজায় পদকে পুঁজি করে নানা কৌশলে একাধিক বিবাহ, বিদেশে লােক পাঠানাের নাম করে মােটা অংকের বেতনে চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হােটেলের মালিক সেযে সাধারণ মানুষকে বােকা বানানাে তাদের কাজ।

আইনশংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এমন কাজে এ দম্পতি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, ভয়ঙ্কর এই প্রতারক তুরস্কে চাকরি দেওয়ার নামে নিজেরা দূতাবাসের কর্মকর্তা সেজে নকল কন্ঠে কথা বলা থেকে শুরু কয়ে হােটেলে বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাদেরদের দেখিয়ে রােহিঙ্গা ক্যাম্পে মােটা অংকের বেতনের চাকরির প্রলােভন দেখিয়ে অগনিত মানুষের কাছ
থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুধু তাই নয়, তুর্কি দূতাবাসের নামে নিজেরই ভুয়া ই-মেইল আইডি খুলে মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জনের অপচেষ্টা করে থাকে। যার ফলে মারাত্মক প্রতারণার শিকার হয়েছে ভুক্তভােগিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভােগি তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, কক্সবাজারে অনেক মানুষ আছে যারা তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

তদন্তে নিজ কর্মস্থল, হোটেল সুইট সালের ২৯ লাখ টাকা জালিয়াতি করে কারাগারে প্রমান মেলে।
তিনি আরও জানান, জীবন শিল্পি এই দম্পতি মাদক কারবারের সাথে জড়িত থাকারও অভিযােগ রয়েছে।

এই প্রতারক জীবন, সাবেক মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের ফাসির আসামি পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন। যার কারণে অনায়াসেই চালাতেন তার মাদক কারবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এই প্রতারক দম্পতি সাবেক এক এসপি’র সাথেও প্রতারণা করেছিলাে। পরে এই এসপির দায়ের করা মামলায় জেলেও গিয়েছিলেন এই জীবন।

কক্সবাজার হােটেল মােটেল জোনের জনৈক কর্মকর্তা জানান, এই দম্পতির বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতাে অভিযােগ তার কাছে অর্ধ শতাধিক রয়েছে।

তার অভিযােগ সমূহ আমলে নিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরী বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

তিনি এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহযােগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শহীদুল ইসলাম জীবনের মােবাইলে
ফোন করা হলে তিনি বলেন, হোটেল স্বপক্ষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মিথ্যা মামলায় ১ দিন জেল খেটেছিলাম। সাধারণ জায়েরির বিষয়টি জানা নেই। অভিযােগকারী আমার ভাগ্নে। পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করে ফেলব।

/দৈনিক কক্সবাজার ৭১ /কক্সবাজার কন্ঠ/ কক্সবাজার

আরও খবর