নিজস্ব প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের চকরিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনায় আগেই মারা গেছেন পাঁচ ভাই। এর আগে তাঁরা হারিয়েছেন বাবাকে। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরেক ভাই রক্তিম সুশীল।তাকেও হারানোর শংকায় রয়েছে সপরিবার। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) আছেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। কারণ তাঁর যে চিকিৎসা দরকার, সেটি হাসপাতালটিতে নেই। এখন তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে।
এক শামিয়ানার নিচে ৫ ছেলের শ্রাদ্ধ, কেমনে সইবেন মৃণালিনীএক শামিয়ানার নিচে ৫ ছেলের শ্রাদ্ধ, কেমনে সইবেন মৃণালিনী
৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীল নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই দিন চমেকে ভর্তি ছিলেন রক্তিম সুশীল। তাঁর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু আইসিইউ খালি না থাকায় পরদিন ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে এক দিন রাখা হয়। কিন্তু আর্থিক কষ্টে থাকা পরিবারটির বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই। এ জন্য পরে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখানে দুদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে আছেন রক্তিম।
ঠিকই তাঁরা শ্মশানে যাবেন, কিন্তু লাশ হয়েঠিকই তাঁরা শ্মশানে যাবেন, কিন্তু লাশ হয়ে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। নিউরোমেডিসিনের তত্ত্বাবধানে যে চিকিৎসা দরকার, সেটি এখানে নেই। এ জন্য আগামীকাল (রোববার) চমেকে নিয়ে যেতে বলেছি।’
রক্তিম সুশীলের বাবা সুরেশ চন্দ্র গত ৩০ জানুয়ারি মারা যান। সুরেশের মৃত্যুর ১০ দিন পূর্ণ হওয়ায় ৮ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে সুরেশের ছেলেমেয়েরা বাড়িতে এসেছিলেন। বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয় ও পাঁচ ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে করতে আর্থিক কষ্টে পড়ে যায় পরিবারটি। এখন রক্তিম সুশীলের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
‘চকরিয়ার সেই পিকআপটি কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন ছিল’‘চকরিয়ার সেই পিকআপটি কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন ছিল’
রক্তিম সুশীলের শ্যালক অনুপম শর্মা বলেন, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে। পরিবারও প্রায় নিঃস্ব। এখন চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে নিহত ব্যক্তিদের মা মানু রানী এখন ক্লান্ত। চোখে আর পানি আসে না তাঁর। পাঁচ ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। আজ শনিবার সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়ি ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হাসিনাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামটিতে। নিস্তব্ধ পুরো পরিবার।
প্রার্থনার ঘরে মা মানু রানী স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষে শুধু বলছেন, ‘ভগবান তুমি রক্তিমকে হলেও ফিরিয়ে দাও। না হয়, কাকে নিয়ে বাঁচব।’
উল্লেখ্য,গত ৩০ জানুয়ারি মারা যান কক্সবাজারের চকরিয়ার সুরেশ চন্দ্র সুশীল। গত মঙ্গলবার তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় আচার শেষে স্থানীয় একটি মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সুরেশ চন্দ্রের পাঁচ ছেলে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশের মালুমঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত পাঁচ ভাই হলেন অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯)। গুরুতর আহত আরেক ভাই রক্তিম সুশীল (৩২) চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। আরেক ভাই প্লাবন সুশীল (২৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বোন হীরা সুশীল (২৮) চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-