আরও সাত এনজিওর লাইসেন্স বাতিল

মনির হোসেন •

সরকারি অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকায় আরও সাতটি এনজিওর (বেসরকারি সংস্থা) লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরো সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনজিওগুলোর মধ্যে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া এনজিওগুলো হলো-ওয়াচ বাংলাদেশ, ডেভেলপমেন্ট ফর হিউম্যান সোসাইটি, অ্যাকশন ফর পুওর পিপল উইথ ইমপ্লয়মেন্ট এপ্রোপ্রিয়েট লিটারাসি, ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, সেন্টার ফর আরবান অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট, সোসিও ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার অ্যাক্টিভিটিজ এবং এইজিং রিসোর্স সেন্টার বাংলাদেশ।

বিদেশি তহবিল নিয়ে এনজিওগুলোর কাজ করার কথা ছিল। ২০২১ সালে ১৮টির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৭১১টি এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এনজিও ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছরে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার অর্থ ছাড় করেছে এনজিও ব্যুরো। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি ছাড় করা হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনজিওগুলোতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এনজিও ব্যুরো বলছে, আওতায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে এনজিওকে আলাদা অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

ফলে দেশে কতটি এনজিও কাজ করছে, তার সঠিক হিসাব সরকারের একক কোনো সংস্থার কাছে নেই। সংস্থাগুলোর কার্যক্রমেও তেমন নজরদারি নেই। অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে-তা যথাযথভাবে মনিটর করা হয় না। সব মিলে এ খাতে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। অনেক এনজিওর বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, দেশের বাইরে অর্থ পাচার, রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, শ্রমিকদের উসকানি দেওয়া এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া ক্ষুদ্র ঋণের নামে কোনো কোনো বেসরকারি সংস্থা গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের প্রান্তিক জনগণ।

জানতে চাইলে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কেএম তারিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় সাতটি এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বিদেশি তহবিল নিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও সেগুলো দীর্ঘদিন কোনো তহবিল আনতে পারেনি।

তিনি বলেন, শর্ত হলো-নিবন্ধনের পর বিদেশি সহায়তা এনে ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে কাজ করা। কিন্তু সংস্থাগুলো নিবন্ধন নিয়ে কোনো কাজ করে না। এগুলোর কোনো কাজকর্মও নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে দেশি-বিদেশি এনজিওর সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার। আর এনজিও ব্যুরোর হিসাব অনুসারে দেশে ২ হাজার ৫৬৫টি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে দেশি ২ হাজার ২০৯টি এবং বিদেশি ৩০০টি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৬৮০টি এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

জানা গেছে, এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ছাড়া এ খাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওগুলোর বিভিন্ন অপতৎপতা রয়েছে।

এ ব্যাপারে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের নামে বিভিন্ন এনজিও বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে আসছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব অর্থ ছাড় করা হচ্ছে। তবে কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এনজিওগুলোর ব্যাপারে সবার আগে সরকারি সংস্থার সমন্বয় জরুরি। বিশেষ করে একটি সংস্থার কাছে অবশ্যই সার্বিক হিসাব ও নজরদারির দায়িত্ব থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এনজিওর নামে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। অনুমোদন দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তাহলে বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব।

তার মতে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফৌজদারি অপরাধ করে। ফলে আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার অর্থ ছাড় করেছে এনজিও ব্যুরো। আগের বছর যা ছিল ৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য বছরে তহবিল কমেছে ৭৯ কোটি টাকা।

 

বিদায়ী বছরে স্বাস্থ্যে ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, পুনর্বাসনে ৮৫৭ কোটি, শিক্ষায় ৭৭৬ কোটি, কৃষিতে ১৭১ কোটি, স্থানীয় সরকারে ১৫৯ কোটি, তথ্যে ৯৮ কোটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ৭৬ কোটি, পরিবেশে ৬১ কোটি, প্রাণিসম্পদে ২৩ কোটি, মৎস্য খাতে ৪ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ছাড়া করা হয়েছে। তবে ছাড় করা অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার কোনো হিসাব এনজিও ব্যুরোর কাছে নেই। কাজগুলো যথাযথভাবে নজরদারি করা হয় না। ব্যুরোর নির্ধারিত অডিট ফার্মের রিপোর্টই ভরসা।

আরও খবর