মহানগর নিউজ •
কক্সবাজারের ডুলাহাজারায় গাড়ি চাপায় ৫ সহোদরের প্রাণ হারানোর ঘটনা নিয়ে নতুন করে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) একই পরিবারের ৭ সদস্য গাড়ি চাপায় হতাহতের ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পূর্ব পরিকল্পিত- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে নিহতের নিকটাত্মীরা এমন অভিযোগ তুলেছেন।
এরআগে ভোরে রাস্তা পারাপারের সময় ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রীশ্চিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অনুপম শীল (৪৭), নিরুপম সুশীল (৪৫), দীপক সুশীল (৪০), চম্পক সুশীল (৩০) সহ চার ভাই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অপর ভাই স্মরণ সুশীল (২৬)। হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আরেক ভাই রক্তিম সুশীল (৩৫)।
জানা যায়, নিহতদের বাবা সুরেশ চন্দ্র সুশীল গত ১০ দিন আগে পরলোকগমন করেন। এ কারণে সনাতন ধর্মমতে, ক্ষৌরকর্ম করতে সুরেশের সন্তানেরা মন্দিরে গিয়েছিলেন। ক্ষৌরকর্ম শেষে মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুরেশ চন্দ্র সুশীল চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ছিলেন। তার ৮ ছেলে, ২ মেয়ে। সকলে বিবাহিত। বড় ছেলে হিরন সুশীল দুই বছর আগে স্ট্রোকে মারা যান। বাকি সাত ভাইদের মধ্যে বড় অনুপম শীল প্যারামেডিক চিকিৎসক। চকরিয়ায় তার একটি ওষুধের ফার্মেসিও রয়েছে। আরেক ভাই নিরুপম সুশীলেরও ফার্মেসি রয়েছে চকরিয়ায়। দীপক সুশীল ওমানে থাকতেন। চম্পক ও স্মরণ দুইজন ব্যবসা করতেন।
নিহতের নিকটাত্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট রঘু মল্লিকের সাথে ঘটনার কয়েকদিন আগে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথন হয় নিহত চম্পক সুশীলের। এ ধরণের কথোপকথনের একটি স্কিন শর্ট এসেছে মহানগর নিউজে। অ্যাডভোকেট রঘু মল্লিকের সাথে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের আলাপে বাড়ি ঘর ভাঙচুরের কিছু ছবি পাঠান চম্পক সুশীল। ছবি পোস্ট করে নীচে লেখেন ‘আসন ভেঙে দিছে, ওরা বাড়িও ভেঙেছে। মো. এমরান। সোয়াজনিয়া।’ তখন অ্যাডভোকেট রঘু মল্লিক জানতে চান, ‘কতজন এসেছিল?’ জবাবে চম্পক সুশীল লিখেন, ‘ঘর ভাঙতে প্রায় ২০/৩০ জন আসছিলো, রাত ১২টা, আর বাবাকেও ওরা টানাহেঁচড়া করছিল।’ কথোপকথনে হামলাকারীদের একটি ফোন নম্বরও দেন রঘু মল্লিককে দেন চম্পক সুশীল।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট রঘু মল্লিক বলেন, চম্পক এর আগে বিভিন্নভাবে তাদের সাথে প্রতিপক্ষের শত্রুতার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছিলেন। এ ঘটনা এতবড় ঘটনায় রূপ নেবে সেটা ভাবিনি। এখন আমরা আশঙ্কার মধ্যে আছি। ঘটনাটি কী এভাবে (দুর্ঘটনা) ঘটলো, নাকি ওভাবে (পূর্ব পরিকল্পিত) ঘটেছে। এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব ঘটনার পেছনে অন্যকিছু আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।’
এর আগে কারা হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চম্পকের বাবা মারা যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে স্থানীয় মোহাম্মদ এমরানের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের মতো ছেলেপেলে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। তারা বৃদ্ধ সুরেশ চন্দ্র সুশীলকে টানাহেঁচড়া করেছে। হামলাকারীরা চম্পকদের উপসনাস্থল ভেঙেছে, বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। মূলত বাড়ি নির্মাণের জন্য চম্পকের পরিবার ইট এনেছিল। রাস্তা দিয়ে ইট বহন নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। চম্পক তার ফেসবুক থেকে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, ‘সড়কে গাড়ি চাপায় ৫ সহোদর মারা গেছে। ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির চালক পলাতক। আমরা চালককে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’
এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত ঘটনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘সকাল থেকে এ ধরণের কোন ঘটনা শুনিনি। এখন এ প্রশ্ন কোত্থেকে আসলো। তারপরও কেউ বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-