নাজিম মুহাম্মদ •
ইয়াবা উদ্ধারে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। গত সাড়ে তিনমাসে প্রায় ১৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-৭। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ উদ্ধার করেছে তিন লাখেরও বেশি ইয়াবা। ইয়াবা উদ্ধারে সফলতা রয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশেরও। চলতি মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কক্সবাজার ও টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সীমান্ত এলাকা থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ইয়াবা ও ১৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করেছে।
বিজিবির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এগারোটি অভিযানে এসব ইয়াবা ও ক্রিস্টাল বা আইস উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে ১১ জানুয়ারি টেকনাফের জীম্বংখালি গাবদাসি এলাকা থেকে ৯০ হাজার, ১৫ জানুয়ারি পালংখালির বালুখাল থেকে ২ লাখ, ২৬ জানুয়ারি নাফ নদীর খারাংখালি থেকে এক লাখ ৮০ হাজার, একইদিনে জিন্নাহখাল থেকে দুই লাখ ৫৮ হাজার ও ২৭ জানুয়ারি ঘুনধুম এলাকা থেকে ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি।
এছাড়া ১১ জানুয়ারি সাবরাং থেকে এক কেজি, ১১ জানুয়ারি মেরিন ড্রাইভ নোয়াখালী পাড়া থেকে দুই দশমিক ৬৪ কেজি, ১৯ জানুয়ারি জ্বালিয়ার দ্বীপ এলাকা থেকে ৪ দশমিক ১৭৫ কেজি, ২০ জানুয়ারি ৫ কেজি, ২১ জানুয়ারি পশ্চিম টেকনাফের পশ্চিম গোয়ালিয়া থেকে এক কেজিসহ মোট ১৩ কেজি আইস উদ্ধার করেছে বিজিবি টেকনাফ ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন। বিজিবির দাবি এসব আইসের বাজারমূল্য ৬২ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ আইস ও ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাচারকারীদের ধরতে পারেনি বিজিবি।
বলা হচ্ছে, বিজিবি সদস্যদের দেখে পাচারকারীরা নাফ নদীর শূন্যরেখায় ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে মিয়ানমার সীমান্তে চলে যায়।
টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, অল্প বিনিয়োগে দ্রুত আর্থিক লাভের লোভে ইয়াবা ও আইস পাচারে ঝুঁকছে পাচারকারীরা। আমরা চেষ্টা করছি সীমান্তে মাদক পাচার রোধ করতে।
২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর ও ডিসেম্বর তিনমাসে নগরীর ষোল থানায় মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯০টি। মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫২৮ জন। উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৭ পিস ইয়াবা, ২৭৬ বোতল ফেন্সিডিল, ১৩১ কেজি গাঁজা, ৪৩৭ লিটার দেশীয় মদ, ১১৯ বোতল বিদেশি মদের বোতল ও ১২৯ গ্রাম ক্রিস্টার মেথ (আইস)।
এছাড়া চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৮১৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এরমধ্যে ৮ জানুয়ারি বায়েজিদ আতুরার ডিপো থেকে ৫ হাজার, চান্দগাঁও মৌলভীপুকুর পাড় এলকা থেকে ১৬শ, ১১ জানুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ লালদিঘি এলাকা থেকে তিন হাজার, ১৪ জানুয়ারি চান্দগাঁও এলাকা থেকে ৩৪শ, একইদিনে চান্দগাঁও এলাকা থেকে ৭শ, ১৫ জানুয়ারি বাকলিয়া থানা পুলিশ ১৪ হাজার, একইদিনে বন্দর থানা পুলিশ ১৮শ, ১৯ জানুয়ারি নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের কর্মকর্তারা ৪ হাজার ৫শ ১৫ ও ২৫ জানুয়ারি নগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিই জোনের কর্মকর্তারা ১৮শ ইয়াবা উদ্ধার করে।
২৩ দিনে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা : র্যাব- ৭ চলতি মাসের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩ দিনে সাড়ে তিন লাখের বেফশ ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
এরমধ্যে গত ৫ জানুয়ারি বালুখালী পান বাজার এলাকা থেকে ৯৯ হাজার, সীতাকু-ের বড় দারোগাহাট থেকে ৩৭ হাজার ১৫, ৬ জানুয়ারি চন্দরনাইশের দেওয়ানহাট এলাকা থেকে ৫০ হাজার ২০, ৭ জানুয়ারি ফেনীর লাল পোল এলাকা থেকে ২০ হাজার ৯৮৫, ১৫ জানুয়ারি ফেনীর ফতেপুর থেকে ১৯ হাজার ৫শ, টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার ৪শ, ২৩ জানুয়ারি বাকলিয়া এলাকা থেকে ৩ হাজার ৬৩০ ও ২৪ জানুয়ারি কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকা থেকে ২৯ হাজার ৮৫০ পিসসহ মোট ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪শ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, ইয়াবা সেবন কিংবা পাচার নির্দিষ্ট একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সাধারণত যে কোন পণ্যের চাহিদা থাকলে সরবরাহ বাড়ে। ইয়াবা ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সাগর এবং স্থলপথ দু’দিকেই ইয়াবা পাচার হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে পাঁচ লাখ, ডিসেম্বরে ছয় লাখ ও চলতি মাসে সাড়ে তিন লাখসহ প্রায় ১৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-