ঈদগাঁওতে খাস জমির বাড়িঘর ভাঙচুর চালাচ্ছে বনবিভাগের লোকজন!

মোঃ নিজাম উদ্দিন:


এক নাম্বার খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে নিরীহ জনগণের বাড়িঘর ভাঙচুর চালাচ্ছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও রেঞ্জ আওতাধীন ভোমিরাঘোনা বনবিটের লোকজন। ম্যানেজ না করায় উচ্ছেদ অভিযান নামের হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দীর্ঘ ৬০ বছরের ভূমিহীন ভোগদখলীয়দের পক্ষে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কিছুতেই। কেউ প্রতিবাদ করলে আসামী হচ্ছে মিথ্যা মামলার, ঘানি টানছে জেলখানার। এমনই অভিযোগ ঈদগাঁও উপজেলার মধ্যম শিঁয়াপাড়া নামক এলাকায়।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদগাঁও ভোমরিয়াঘোনা মৌজার মধ্যম শিঁয়াপাড়ার খাস খতিয়ানভুক্ত- আর.এস ৪নং খতিয়ানের ২০৩৫/৮৬২৯ দাগ ও বি.এস ১নং খতিয়ানের ২৭৪০ দাগের অন্দরে উঁচুনিচু জায়গায় বিগত ৫০-৬০ বছর আগে ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলে তারা এখানে এসে বসবাস করে আসছে। এসব জায়গায় বনবিভাগের স্বত্ব না থেকেও মানুষের বাড়িঘর উচ্ছেদ অভিযান নামের নির্যাতন চলছে। এলাকার লোকজন এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০০৭ সালে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ছুরত আলমের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করে। যার স্বারক নং- ৪৬৯/এস.এ/তাং- ২/৪/২০০৭ খ্রিঃ। সমগ্র বিষয়াদি বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক ওই এলাকার লোকজন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাগবে মর্মে নির্দেশ দেন। পরে এসিএফ সহ বনবিভাগের লোকজনকে জেলা প্রশাসকের লিখিত কাগজ, আরএস ও বিএস খতিয়ান দেখানো হলে খাস খতিয়ানভুক্ত এসব জায়গায় নজর দেয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছর খানেক থেকে সেই মধ্যম শিঁয়াপাড়ায় বাড়িঘর সংস্কার করতে চাইলেও বন বিভাগের লোকজন ম্যানেজ না করলে অভিযান নামের ভাঙচুর চালাচ্ছে। এই অন্যায় জুলুমের প্রতিবাদ করলে নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে জেল খাটাচ্ছে। এ মামলায় খাস খতিয়ানের দাগ নাম্বার গোপন রেখে বনবিট আওতাধীন সরকারী বনভুমির দাগ প্রকাশ করা হচ্ছে। যার অবস্থান ঘটনাস্থল থেকে সীমানা খালের অপর প্রান্তে অনেক দুরে। আবার কিছু মামলায় দাগ-খতিয়ানের নামনিশানাও প্রকাশ করছে না।

ভুক্তভোগীরা জানায়, গত ১৫ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় মধ্যম শিঁয়াপাড়ার ভোগদখলীয় খাস জায়গার নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করে বনভুমির দাগ উল্লেখ করে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। সেই বন মামলায় আসামী করা হয়েছে রোমানা আক্তার ও হাবিবুর রহমান নামের দুই জনকে।

এরপর গত ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে একটি বসতবাড়ি সংস্কারকালে কোনপ্রকার দাগসিট নাম্বার উল্লেখ না করে ঈদগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে। সেখানে ৮ জনের নাম ও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামায় আসামী করা হয়েছে। এ মামলায় গত ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টায় এ মামলায় আবদুল আলীম ও জাফর আলম নামের এলাকার দুই নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করে থানা পুলিশ। আটকের পরদিন বিকেল ৩টার তাদের আদালতে প্রেরণ করে। এভাবে ভোমরিয়াঘোনা মৌজার এক নাম্বার খাস খতিয়ানের মধ্যম শিয়াপাড়া এলাকায় ৬০ বছরের ভোগদখলীয় জায়গায় হয়রানির শিকার হচ্ছে অসহায় লোকজন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে একের পর এক নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালাচ্ছে বনবিভাগের লোকজন।

এ ব্যাপারে ভোমরিয়াঘোনা বনবিটের হেডম্যান বাদশা মিয়া জানান, মধ্যম শিঁয়াপাড়ায় ৫০-৬০ বছর ধরে বসবাস করা ওসব বাড়িঘরে আগে কেউ অভিযান চালায়নি। বছরখানেক ধরে চলছে এ উচ্ছেদ অভিযান। আমিও রেঞ্জার সাহেব থেকে মাসখানেক আগে তিনটি ঘর নির্মাণের অনুমতি নিয়েছিলাম। এগুলো একমাস পর-পর একটি করে নির্মানের সিদ্ধান্ত নিই। এখন তাও পারা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঈদগাঁও রেঞ্জ কর্মকর্তা আনুয়ার হোসাইন খান রনি বলেন, হেডম্যান বাদশার কথাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বনবিভাগের কোন জায়গায় বাড়িঘর করতে কাউকে অনুমতি দিইনা। বনভুমি দখলের খবর পাওয়ার সাথে-সাথে উচ্ছেদ অভিযান চালাই। মধ্যম শিঁয়াপাড়া খাস খতিয়ানভুক্ত জমিগুলো বনভুমি কিনা জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে মুটামুটি নিশ্চিত বলে জানান।

আরও খবর