নুপা আলম •
২০২০ সালে ৩১ জুলাই রাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই নিহত হওয়ার পর পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় ২ টি এবং রামু থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে সিনহার বোন শারমিন শাহারিয়ার। মামলাটির তদন্ত দেয়া হয় র্যাবকে।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযুক্ত পত্র দাখিল করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে সাক্ষ্য গ্রহণ। যেখানে ৮ দফায় ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিদের ৩৪২ ধারা বক্তব্য গ্রহণ, ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য্য করে আদালত।
ঘটনার ১৮ মাসের মাথায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, মামলার সাক্ষী সিনহার সাথে সাক্ষাত হওয়া ওসি প্রদীপ দ্বারা নির্যাতিত ২ পরিবারের সাথে আলাপ করেছেন এই প্রতিবেদক। দেড় বছর পরে তারা কি বলেছেন এবং মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী রায় নিয়ে কি ভাবছেন জানাতে চাওয়া হয়েছে। পাঠকের জন্য তা উপস্থাপন করা হল।
হাফেজ মো. আমিন : মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্ট। যার নিকটেই অবস্থিত বায়তুননুর জামে মসজিদ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে মসজিদের ছাদে অবস্থান করছিলেন মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আমিন।
সিনহার বোনের দায়ের করা হত্যা মামলায় র্যাবের দাখিল করা অভিযোগ পত্রের অন্যতম সাক্ষী তিনি। আদালতে সাক্ষ্যও প্রদান করেছেন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করার শুরু থেকে তিনি ঘটনা প্রত্যক্ষ করছেন। ঘটনার পর ওসি প্রদীপের ঘটনাস্থলে আসা, পা দিয়ে গুলিবিদ্ধ সিনহার গলায় চাপ দেয়া, পিকআপ করে মৃতদেহ হাসপাতালে প্রেরণসহ সব কথাই বলেছেন হাফেজ আমিন।
তিনি বলেছেন, ১ আগস্ট ছিলো কোরবানের ঈদ। ঈদের জামাত, পশু কুরবানীর বিষয়ে কেন্দ্রিয় মসজিদের মাইকিং এর ঘোষণা শুনতে তিনি সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মসজিদের ছাদে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় এপিবিএন এ চেকপোষ্টে উচ্চস্বরে কথা শুনলে ওইদিকে দৃষ্টি দেন।
ওই সময় দেখা যায়, সিলভার রঙের একটি কার গাড়ির সামনে শামলাপুর ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর লিয়াকত পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এসআই নন্দ দুলাল। পূর্বে একজন এবং পশ্চিমে ২ জন এপিবিএন সদস্য দাঁড়ানো ছিলেন।
হাফেজ আমিন জানান, তখন লিয়াকত চিৎকার করে গাড়ি থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দিলে গাড়ির পশ্চিম পাশ থেকে ২ হাত উপরে তুলে লম্বা চুল থাকা এক যুবক বের হন। লিয়াকতের নির্দেশ পেয়ে এপিবিএন এর ২ সদস্য ওই যুবককে ২ হাত ধরে রাখে। লিয়াকত আবারো চিৎকার দিয়ে গাড়িতে থাকা ব্যক্তিকে বের হওয়ার জন্য বলেন।
এরপর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে থাকা ব্যক্তি হাত উপরে তুলে গাড়ি থেকে বের হন এবং লিয়াকতের দিকে সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ান। মূহুর্তেই কোন কথা না বলে লিয়াকত পর পর ২ টা গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তি সামনের দিকে হেলে মাটিতে পড়ে গেলেও লিয়াকত সামনে এসে আবারো ২ রাউন্ড গুলি করেন বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়া ব্যক্তিকে লিয়াকতের নিদের্শ মতে নন্দ দুলাল হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দেন এবং লম্বা চুলের ব্যক্তিকে হ্যান্ডকাপ পড়ানোর জন্য বলা হলে এপিবিএন এর ২ সদস্য তাদের কাছে হ্যান্ডকাপ না থাকার কথা লিয়াকতকে জানান। এতে লিয়াকত ক্ষুব্দ হয়ে এপিবিএন সদস্যদের গালিগালাজ করেন।
এসময় পূর্ব পাশে থাকা এপিবিএন এর অপর সদস্য শামলাপুর লামার বাজার দিকে গিয়ে রশি নিয়ে আসেন এবং চুল লম্বা ব্যক্তির হাত পেছনে দিয়ে বেঁধে বসিয়ে রাখেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-