পলাশ বড়ুয়া •
কক্সবাজারের উখিয়ায় ৩৫ দিনেও “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি)” কর্মসূচীর ১ম পর্যায়ের মজুরির টাকা পায়নি হতদরিদ্র দিনমজুররা। শ্রমিক তালিকায় তথ্যের অমিল, হাজিরায় গড়মিল, কাজে ধীরগতি, দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও সুশীলনের অনিয়ম ও ট্যাগ অফিসারদের সমন্বয়হীনতার কারণে শ্রমিকরা ন্যায্য টাকা পাচ্ছে না এমনটি অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ৫১৫৯জন শ্রমিক দৈনিক ৪০০টাকা করে ৫৮ দিনে প্রায় ১২ কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাবেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে জালিয়াপালং ৮২৬ জন, পালংখালী ১৬১৬ জন, রত্নাপালং ৪৬৫ জন, হলদিয়াপালং ১১৯৩ জন ও রাজাপালং ১০৫৯ জন মোট ৫ হাজার ১৫৯ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
অথচ কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে মাসব্যাপী কাজ করেও বেতন না পেয়ে হতাশায় ভুগছে সাধারণ শ্রমিকরা। এনজিও সুশীলনের কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন।
তিনি বলেন, পালংখালীতে ১৬১৬জন শ্রমিক কাজ করেছে। তৎমধ্যে ২৫৩ জনের মোবাইল নাম্বারের ক্ষেত্রে সুশীলন তাদের নিজস্ব নাম্বার দিয়েছে। সেই তালিকার মোবাইল নাম্বারের সাথে কাজ করা শ্রমিকদের মোবাইল নাম্বারের কোন মিল নেই। এদের মধ্যে এমন মোবাইল নাম্বারও রয়েছে যারা বিদেশে অবস্থান করছে, কেউ উত্তরবঙ্গে -কেউবা জেলে। তারা এমনটি কেন করেছে তা জানিনা, তবে নয়ছয় এবং দুর্নীতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য করেছে বলে আমার ধারণা।
এ ব্যাপারে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, এবারও সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম কর্তৃক প্রদানকৃত শ্রমিক তালিকা নিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই তালিকায় জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার কিংবা মোবাইল নাম্বার (মোবাইল ব্যাংকিং) ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। তৎমধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক অনুপস্থিত রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও সুশীলন শ্রমিকদের তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে হাউস হোল্ড সার্ভে করেনি। যার ফলে শ্রমিকের তথ্য বিভ্রাট হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে আগামীতে নতুন করে শ্রমিক নিযুক্ত করা হবে।
এদিকে শ্রমিকদের জনপ্রতি দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিজ নিজ মোবাইলে প্রেরণের কথা থাকলেও এখনো একটি টাকা পায়নি। অথচ কর্মসৃজন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৫৮ দিনের মধ্যে ৩৫ দিন কাজ শেষ করেছে শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, ৩৫ দিন কাজ করেছি কিন্তু এক টাকাও পায়নি এ পর্যন্ত। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে যোগাযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে তারা জানায়।
প্রতিটি ইউনিয়নে এনজিও সংস্থা সুশীলন ছাড়াও কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজের তদারকি করছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রকৃত উপকারভোগীদের সঠিক তথ্য না আসায় বিল দেয়া সম্ভব হয়নি। সুশীলনের গাফেলতির কারণে বিল ছাড় করা সম্ভব হয়নি। কারণ পুরো উপজেলার ৪৫টি ওয়ার্ডে তাদের দুইজন লোক দিয়ে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবার বিশ্ব ব্যাংক ও সরকারী অর্থায়নে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এবার মনিটরিং করার জন্য থার্ড পার্টি হিসেবে এনজিও সুশীলনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে শ্রমিকদের হাজিরা, মাষ্টাররোল, পেমেন্ট প্রসেস করা। এই সপ্তাহর শেষের দিকে শ্রমিকদের মজুরীর টাকা ছাড় হতে পারে এটাও বলেন।
কর্মসৃজন প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও সুশীলন এর সহকারী পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের। তাদের দেয়া উপকারভোগীদের তথ্য ও মোবাইল নাম্বার যাচাই-বাছাই ও দৈনিক হাজিরার রিপোর্ট করা হচ্ছে সুশীলনের কাজ।
তিনি বলেন ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি প্রকল্পে শ্রমিকদের হাজিরা নেয়ার জন্য দুইজন কর্মী রয়েছে। তারা যখন যে প্রকল্পে যাচ্ছে ওই প্রকল্পের হাজিরার রিপোর্ট পিআইও অফিসকে জানানো হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু পিআইও অফিসে জনবল সংকট, সেজন্য সুশীলনকে হাজিরা কিংবা মনিটরিং করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, সুশীলন, পিআইও অফিস এবং ট্যাগ অফিসার সবাই মিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখানে বিধির বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। যদি কেউ আইন লঙ্গন করে তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-