বাংলা ট্রিবিউন •
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজী ও নাশকতার পরিকল্পনায় সংঘবদ্ধ হয়েছিল মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল মো. শাহ আলী নামের এক আরসা নেতা। যিনি সংগঠনের প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির ভাই।
দেড় মাস ধরে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পাহাড়ে তার অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান করছিল শাহ আলী। শেষে পুলিশি তৎপরতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির অবস্থান ও তার পরিকল্পনার কথা পুলিশকে জানিয়েছে শাহ আলী। আতাউল্লাহ এখন মিয়ানমারের একটি পাহাড়ে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছে সে। পাহাড়টির নামও জেনেছে পুলিশ। তবে এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই পাহাড়ে বসেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে থাকা আরসা’র বিভিন্ন গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করছে আতাউল্লাহ।
শাহ আলীকে ইতোমধ্যে পুলিশসহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, ‘শাহ আলী আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির ভাই। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সে বাংলাদেশে থাকে না। কোনও ক্যাম্পে স্থায়ীভাবে তাকে দেখা যায় না। সে অবৈধভাবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। দেড় মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন পাহাড়ে সে পালিয়ে ছিল।’
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলে চাঁদাবাজী করে অর্থ আদায় করাই ছিল শাহ আলীর অন্যতম দায়িত্ব। আরসা প্রধান আতাউল্লাহর সঙ্গে শাহ আলীর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। শাহ আলী মিয়ানমারেই বেশি সময় থাকে। বিশেষ ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে বাংলাদেশে আসে।
শাহ আলীকে অস্ত্র ও মাদকসহ রবিবার (১৬ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়ার ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকা গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা যদিও তাকে কথিত আরসা সদস্য বলছে। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি বলেও জানিয়েছে পুলিশ। চাঁদাবাজী, জিম্মি, মুক্তিপণ ও মাদক ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করতে ওই অস্ত্র ব্যবহার করতো সে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শাহ আলী ২০১৯ সালেও একবার গ্রেফতার হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন এনজিও সংস্থার আইনি সহায়তায় মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। এরপর প্রায় দেড় বছর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সর্বশেষ অপহৃত এক কিশোরকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট এপিবিএন’র ১৪ সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে।
এপিবিএন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শাহ আলীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতোমধ্যে সে কিছু তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। কোনও হত্যাকাণ্ড ও হামলায় জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
তিন বছরে পাঁচ শতাধিক আরসা সদস্য গ্রেফতার
গত তিন বছরে পাঁচ শতাধিক আরসা সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন-১৪। তবে গ্রেফতারের পর এসব সদস্যরা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার আইনি সহায়তায় জামিন পায়। যদিও পুলিশ সদস্যরা এসব গ্রেফতারকৃতদের কথিত আরসা সদস্য বলেছেন।
কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক বলেন, ‘শাহ আলীকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়েছে। আমরা তাকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘নাশকতার পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিল সে। আমরা তার কাছ থেকে আরসা প্রধানের কিছু তথ্য পেয়েছি।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-