মিজানুর রহমান •
১১০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুলেট ট্রেন চালুর প্রকল্প থেকে সরে আসছে রেলওয়ে। বিদ্যমান অবকাঠামো উচ্চগতির ট্রেন চলাচলে সহায়ক না হওয়ায় সম্ভাব্যতা যাচাই এবং নকশা প্রণয়নের মধ্যেই আটকে যাচ্ছে প্রকল্পটি। ফলে বুলেট ট্রেনে চড়ে ১ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের যে স্বপ্ন এ জনপদের মানুষ দেখছিলেন তা আপাতত পূরণ হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এরপরেও দেশের কোনো রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্রেনই চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। সম্প্রতি নতুন কিছু রেললাইন নির্মাণ করা হলেও ট্রেন চলছে পুরনো ইঞ্জিনে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর আগেই বুলেট ট্রেন চালুর প্রকল্প নেওয়া ছিলো উচ্চবিলাসী।
এছাড়া ২০১৬ সালে করা ৩০ বছরের জন্য রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যানেও বুলেট ট্রেনের বিষয়টি ছিলো না। মাস্টার প্ল্যানের বাইরে গিয়ে বাস্তবতা না বুঝে নেওয়ায় উচ্চবিলাসী এই প্রকল্পের জন্য এখন মাশুল দিতে হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলেও ব্যয় হয়ে গেছে রাষ্ট্রের ১১০ কোটি টাকা। যেটা দিয়ে বাস্তবায়ন করা যেত রেলওয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্য প্রকল্প। সূত্র জানায়- রেলপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১৮ কিলোমিটার রেলপথ আগে থেকেই ডাবল লাইন ছিলো। ২০০৯ সালের পর কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩১ কিলোমিটার সিংগেল লাইন রেলপথ ডাবল লাইন করা হয়। বাকি ৭২ কিলোমিটার সিংগেল লাইন রেলপথ ডাবল লাইন করতে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
এখন ‘দ্রুতগামী’ ট্রেন সোনার বাংলা কিংবা সূবর্ণ এক্সপ্রেসে চড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ট্রেন চলে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে। দেশের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই রেলপথে বিদ্যমান রেলসেবার মানোন্নয়নে ২০১৭ সালে বুলেট ট্রেন চালুর প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান- বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার থেকে কমে ২২৭ কিলোমিটারে নেমে আসবে। ৬ ঘণ্টা নয়, মাত্র ৫৫ মিনিটেই বুলেট ট্রেনে চড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৩০০ কিলোমিটার গতিতে বুলেট ট্রেন ছুটবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ করে গত অক্টোবরে রেলওয়েকে জমা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নভেম্বরে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
তবে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আপাতত পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এই প্রকল্প আমরা পরিকল্পনার মধ্যে রাখিনি। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়ন আমরা করেছি। তবে এটা নিয়ে আমরা একটু স্লোতে চলছি।
এর কারণ হিসেবে রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি অবকাঠামোগত দিক থেকে আমাদের অনেক প্রকল্প রয়েছে, যেগুলো এই প্রকল্পের (বুলেট ট্রেন) চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পের (বুলেট ট্রেন) টাকা দিয়েই সেগুলো করা সম্ভব। সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়ন করে টাকা অপচয় করা হয়নি। পরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এসব কাজে আসবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-