পিএমখালীতে অবৈধ করাতকল গিলে খাচ্ছে বনাঞ্চল: হুমকির মুখে পরিবেশ

জাহেদ হাসান:


কোন মতেই যেন বন্ধ করা যাচ্ছে না কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর অবৈধ করাতকলগুলো। করাতকলগুলোর করাল গ্রাসে উজার হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। আর এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। একই সাথে সরকারের রাজস্ব থেকে খোয়া যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যত্রতত্র স্হাপিত অবৈধ করাতকল গুলো গিলে খাচ্ছে শত শত একর সামাজিক বনায়নের গাছ।

গ্রামবাসীর ভাষ্য মতে,কোনসময় পিএমখালীতে অবৈধ করাতকল এর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। বনবিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থাপিত করাতকলে চোরাই গাছ চিরাইয়ের মহোৎসব চলছে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের পিএমখালী রেঞ্জ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বনের একেবারে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ করাতকল। যে কলগুলোতে দিনদুপুরে কিংবা রাতের আঁধারে বন থেকে গাছ চুরি করে নিয়ে আসার পর প্রকাশ্যে চিড়ে কাট বানানো হয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, বন থেকে চুরির গাছগুলো অল্প সময়ের মধ্যে সাবাড় করতেই স্থাপন করা হয়েছে এসব করাতকল।মূলত এসবকলের কারণেই উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা বনের অধিকাংশ গাছগাছালি।এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাস করা কষ্টদায়ক হবে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘাটা, সুইচগেইট, নোয়াপাড়া,মাছুয়াখালী ও ডিকপাড়া এলাকায় স্থাপিত অবৈধ স মিলে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন করে চিরাই করছে পাচারকারীরা। এসব চিরাই করা কাঠ ডাম্পার ও জীপযোগে ফার্নিচারের দোকান সহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে।

তবে প্রশাসন বলছে, অবৈধ করাতকল রোধে তৎপর রয়েছেন তারা। এদিকে কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা করাতকলগুলোই বনের গাছগুলোকে গিলে খাচ্ছে বলে অভিমত স্থানীয় সচেতন মহলের। সচেতনমহল বলছে, প্রশাসন যদি কঠোর হতো তা হলে বনের গাছ চুরি করা দুরের কথা করাতকলগুলোতে আসার সুযোগই থাকত না। গাছ চুরি থেকে শুরু করে কল পর্যন্ত পৌছানোর প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষা ভাবে মদদ রয়েছে বন কর্তৃপক্ষের অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিমত, অবৈধভাবে গড়ে উঠা অর্ধ শতাধিক স মিলের কারনে সামাজিক বনায়ন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে । পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স বিহীন করাতকল গুলো উচ্ছেদ করা পিএমখালীর মানুষের এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সচেতন নাগরিক সমাজ জানান, এযাবতকাল ওই এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা বন বিভাগের কোন অভিযান অথবা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চোখে পড়েনি। বছরের পর বছর প্রকাশ্যে এসব স মিলে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন সহ চিরাই করা হচ্ছে।

পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান , করাতকল উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ অবগত হয়েছে।দ্রুত অবৈধ করাতকল এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন,জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় খুব শীঘ্রই আমরা অবৈধ করাতকল গুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।

আরও খবর