রাজু দাশ, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহীদের ঠেকাতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংগঠনের কঠোর হুঁশিয়ারি, এমনকি বহিষ্কার হলেও ভোটের মাঠ ছাড়ছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। বরং দল মনোনীত প্রার্থী ও প্রতীক ডুবাতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
চতুর্থ দফায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৮টি ইউনিয়নে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ৮ জন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের ২জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতিকে ২জন। এর মধ্যে ৩৭ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আগামী (২৬ ডিসেম্বর) চতুর্থ দফায় ৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীতরা পড়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে বেকায়দায় নৌকার প্রার্থীরা হলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে হাসানুল ইসলাম আদর (আনারস), কলিম উল্লাহ কলি (টেলিফোন), চিরিঙ্গায় জসিম উদ্দিন (চশমা), জামাল হোসেন চৌধুরী (আনারস), হারবাংয়ে ছৈয়দ নূর, (মোটরসাইকেল) ও বমুবিলছড়িতে মো. কপিল উদ্দিন (আনারস)।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, চিরিঙ্গা ইউনিয়নে কেএম সালাহউদ্দিন (মোটরসাইকেল), নাজের হোছাইন (হাতপাকা), মো. করিম (ঘোড়া) ও মো. শাহনেওয়াজ রুমেল (নৌকা)।
ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নে নাসির উদ্দিন (মোটরসাইকেল), বদরুচ্ছালাম (লাঙ্গল), মো. কুতুব উদ্দিন (আনারস), শওকত ইসলাম (চশমা), হামিদ হোসেন (টেলিফোন) ও হেলাল উদ্দিন (নৌকা)।
বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে আবদুল মতলব (চশমা), মনজুরুল কাদের (নৌকা)
ডুলাহাজারা ইউনিয়নে এমরানুল হক (রজনীগন্ধা), গিয়াস উদ্দিন (চশমা), নুরুল আমিন (লাঙ্গল), মো. মাহবুবুর রহমান (মোটরসাইকেল), মোস্তাফিজুর রহমান (টেবিল ফ্যান), মো. নাঈম (ঢোল), মো. সেলিম (অটোরিক্সা), শাহনেওয়াজ তালুকদার (নৌকা), ও সোহেল মাহমুদ (ঘোড়া)। বরইতলী ইউনিয়নে এটিএম জিয়াউদ্দীন চৌধুরী জিয়া (নৌকা), জালাল আহমদ সিকদার ( আনারস), মো. ছালেকুজ্জামান (চশমা) ও রফিক আহমদ সিদ্দিকী (ঘোড়া)। হারবাং ইউনিয়নে ছৈয়দ নূর ), জহির উদ্দিন আহমদ বাবর (আনারস), জয়নাল আবেদীন (রজনীগন্ধা), জাহেদুল ইসলাম (চশমা), বোরহান উদ্দিন (দুটি পাতা), মুরাদ উদ্দিন চৌধুরী (টেলিফোন), মেহেরাজ উদ্দিন (নৌকা), মো. শোয়াইব (ঘোড়া), সাইদুল ইসলাম (অটোরিক্সা) ও ছাবের আহমদ (টেবিল ফ্যান)। খুটাখালী ইউনিয়নে আজিজুল হক (হাতপাকা), এস এম মনজুর আলম (আনারস), মুহাম্মদ আবদুর রহমান (মোটরসাইকেল), মো. বেলাল (নৌকা), মো. কায়েস (ঘোড়া) ও মো. রিহাবুল আলম (চশমা)।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজিমুল হক আজিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচত হয়েছেন।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ ইউপির নির্বাচন তৃতীয় দফায় সম্পন্ন হয়েছে। চতুর্থ দফায় ৮ ইউপির নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠতি হবে। এ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের কারণে এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা বেকায়দায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিস্কারের দাবীও উঠেছে জোরালোভাবে। তাদের বহিস্কার না করলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। বিদ্রোহীর পাশাপাশি আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে গণসংযোগ ও সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দলের মধ্যে অন্তঃকোন্দল থাকায় নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহীরা প্রার্থী হয়েছেন। তাদের দমন করা না গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা দলীয় নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারপরেও, বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারছে না দলটি। তৃতীয় ধাপে প্রায় সব ইউপিতেই নৌকার প্রার্থীকে লড়তে হয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এতে কৈয়ারবিল ইউনিয়নে অনুষ্টিত হওয়া নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জন্নাতুল বকেয়া রেখা শুধু ৯৯ ভোট পেয়েছেন। বিজেতাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কর্মী কিংবা সমর্থক। আবার চতুর্থ ধাপের ভোটেও ইউপি চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহীরা।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে চকরিয়ার ১০ ইউপির মধ্যে ৫টির ভরাডুবি হয়েছে। একইভাবে চতুর্থ দফা নির্বাচনে ৮টির নির্বাচন চলছে। সেখানেও নৌকার বিরোধীতা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌকার বিরোধীতা করলে তাদের তালিকা করে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোর জন্য দলের প্রার্থীদের বলা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-