ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারাও

বিশেষ প্রতিবেদক :

ফেসবুকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আদালতে একযোগে মামলা হওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজারে বসবাস করা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে তারাও এ ধরনের মামলা করতে চান।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর পেছনে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির বিরুদ্ধে ওই দুটি দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পক্ষে সোমবার মামলা হয়েছে।

রয়টার্স, বিবিসি, এপি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব মামলায় মোট ১৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা খিন মং বলেন, ‘ফেসবুক এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, বরং একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। মিয়ানমার সরকারের হাতে যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী গণহত্যার শিকার হয়েছে, তখন থেকেই সামাজিক এই মাধ্যমটি মিয়ানমারের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। তাই ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলাটি আমরা সমর্থন করি।’

‘মিয়ানমার সরকার সে দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এখনও। আর ওই দেশ ও সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক। এমনকি এখন পর্যন্ত ফেসবুক রোহিঙ্গাদের পক্ষে যায় এমন সব তথ্য তাদের সাইট থেকে কোনও ঘোষণা ছাড়াই সরিয়ে নিচ্ছে, যা দুঃখজনক,’ বলেন খিন মং।

মামলা করার বিষয়ে খিন মং বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের সুযোগ করে দিলে আমরাও ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রস্তুত। কেননা ১০ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছাড়ার পেছনে এই মাধ্যমটিও সহযোগিতা করেছে। তা না হলে কেন তারা রোহিঙ্গাদের গণহত্যার তথ্য-প্রমাণ লুকিয়ে রেখেছে।’

কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসকারী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিটার বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে গণহত্যা হয়েছে, তার প্রমাণ অনেকেই ফেসবুকে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু ফেসবুক মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে কোনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই তা সরিয়ে নিয়েছে। উল্টো ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছে।’

‘ফেসবুকের মামলাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। মামলার কারণে ফেসবুক যদি আমাদের তথ্য প্রমাণগুলো ফিরিয়ে দেয়, সেগুলো আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উপস্থাপন করতে পারবো এবং বিচার নিশ্চিত করতে তা অনেক কাজে আসবে,’ যোগ করেন পিটার।

দাতব্য প্রতিষ্ঠান এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। ওই ঘটনার পর রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়। সেখানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘ফেসবুকের বিরুদ্ধে যে আরজি নিয়ে আদালতে মামলাটি হয়েছে, সেটার সাথে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে এবং প্রকারান্তরে এক ধরনের ঘৃণা ছড়ানোর কারণেই তারা আক্রান্ত হয়েছে। এর বিচার যেকোনও পর্যায়ে চাওয়াটাই ন্যায়সঙ্গত। এই মামলায় সুফলভোগী হবে রোহিঙ্গারা, যদি মামলাটি বিচারের দিকে যায়।’

আরও খবর