স্পোর্টস ডেস্ক •
ক্লাব ফুটবলে গেল মৌসুমটা আহামরি না কাটলেও জাতীয় দলের হয়ে দীর্ঘ শূন্যতা ঘোচানোর মাঝেই আসল কাজটা সেরে ফেলেন লিওনেল মেসি। বর্ষসেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে এগিয়ে যান অনেকটা। মিলে গেল তার স্বীকৃতিও। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালের ব্যালন ডি’অর জিতে নিলেন আর্জেন্টাইন তারকা।
প্যারিসে সোমবার রাতে জমকালো অনুষ্ঠানে মেসির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ –এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর ২০২১।
সেরার লড়াইয়ে ৬১৩ পয়েন্ট পেয়েছেন মেসি। ৩৩ পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন রবের্ত লেভানদোভস্কি। ব্যালন ডি’অরের নতুন পুরস্কার বর্ষসেরা স্ট্রাইকারের খেতাব অবশ্য তিনিই জিতেছেন।
বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জয়ের রেকর্ডটা আগে থেকেই মেসির। সংখ্যাটাকে আরও বাড়িয়ে নিলেন এই মহাতারকা। রেকর্ড সাতবার, যেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে! দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার পুরস্কারটি জিতেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে ৩৭ বছরে পা দিতে যাওয়া ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
এখনও খেলছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে পুরস্কারটি আর জিতেছেন কেবল ৩৬ বছর বয়সী লুকা মদ্রিচ, একবার ২০১৮ সালে।
আগের ছয়বার মেসি এই পুরস্কার জিতেছেন-২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। আগের ছয়বারই এই স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন বার্সেলোনায় থাকাকালীন।
বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ ২১ বছরের সম্পর্ক শেষে গত অগাস্টে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। কাতালান ক্লাবটিতে বিদায়ী মৌসুমটা তার খুব ভালো কাটেনি। তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে তিনি বরাবরের মতোই ছিলেন উজ্জ্বল। লা লিগায় সর্বোচ্চ ৩০ গোল করে রেকর্ড অষ্টমবারের মতো জেতেন পিচিচি ট্রফি। আর কোপা দেল রের ফাইনালে আথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ে জোড়া গোল করেন তিনি।
এরপর গত জুলাইয়ে ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই হারিয়ে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ে নেতৃত্ব দেন মেসি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর মিশনে চার গোল করে ও পাঁচটি করিয়ে সামনে থেকে পথ দেখান তিনি। আসরে ব্রাজিলের নেইমারের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন ৩৪ বছর বয়সী তারকা।
১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এর পর থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে কেবল ইউরোপের সেরা নয়, পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে আবার একাই ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু করে ফ্রান্স ফুটবল। ব্যালন ডি’অর জয়ী নির্ধারণ করা হয় সাংবাদিকদের ভোটে।
সেরা ত্রিশ:
প্রথম: লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা/পিএসজি/আর্জেন্টিনা)
দ্বিতীয়: রবের্ত লেভানদোভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ/পোল্যান্ড)
তৃতীয়: জর্জিনিয়ো (চেলসি/ইতালি)
চতুর্থ: করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স)
পঞ্চম: এনগোলে কঁতে (চেলসি/ফ্রান্স)
ষষ্ঠ: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (ইউভেন্তুস/ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল)
সপ্তম: মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল/মিশর)
অষ্টম: কেভিন ডে ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি/বেলজিয়াম)
নবম: কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/ফ্রান্স)
দশম: জানলুইজি দোন্নারুম্মা (এসি মিলান/পিএসজি/ইতালি)
একাদশ: আর্লিং হলান্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/নরওয়ে)
দ্বাদশ: রোমেলু লুকাকু (চেলসি/বেলজিয়াম)
ত্রয়োদশ: জর্জো কিয়েল্লিনি (ইউভেন্তুস/ইতালি)
চতুর্দশ: লিওনার্দো বোনুচ্চি (ইউভেন্তুস/ইতালি)
পঞ্চদশ: রাহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড)
ষোড়শ: নেইমার (পিএসজি/ব্রাজিল)
সপ্তদশ: লুইস সুয়ারেস (আতলেতিকো মাদ্রিদ/উরুগুয়ে)
অষ্টাদশ: সিমোন কেয়া (এসি মিলান/ডেনমার্ক)
১৯তম: ম্যাসন মাউন্ট (চেলসি/ইংল্যান্ড)
২০তম: রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি/আলজেরিয়া)
যৌথভাবে ২১তম: লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান/আর্জেন্টিনা), ব্রুনো ফের্নান্দেস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল)
২৩তম: হ্যারি কেইন (টটেনহ্যাম হটস্পার/ইংল্যান্ড)
২৪তম: পেদ্রি (বার্সেলোনা/স্পেন)
২৫তম: ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড)
যৌথভাবে ২৬তম: জেরার্দ মরেনো (ভিয়ারিয়াল/স্পেন), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি/পর্তুগাল), নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান/ ইতালি)
যৌথভাবে ২৯তম: লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ/ক্রোয়েশিয়া), সেসার আসপিলিকুয়েতা (চেলসি/স্পেন)
সবশেষ ১০ বারের বর্ষসেরা ফুটবলার:
একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর
২০১১ লিওনেল মেসি
২০১২ লিওনেল মেসি
২০১৩ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৪ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৫ লিওনেল মেসি
দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার ব্যালন ডি’অর
২০১৬ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৭ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৮ লুকা মদ্রিচ লুকা মদ্রিচ
২০১৯ লিওনেল মেসি লিওনেল মেসি
২০২০ রবের্ত লেভানদোভস্কি (কোভিডের কারণে দেওয়া হয়নি)
এই বছরের নারী ফুটবলের ব্যালন ডি’অর প্রত্যাশিতভাবেই জিতেছেন আলেকজিয়া পুতেয়াস। গত মৌসুমটা বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডারের স্বপ্নের মতোই কাটে।
স্পেনের শীর্ষ ঘরোয়া লিগ জয়ের পাশাপাশি বার্সেলোনার জার্সিতে তিনি জেতেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার ফাইনালে তার নেতৃত্বেই চেলসির বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জেতে বার্সেলোনা। ওই ম্যাচে একটি গোলও করেন তিনি।
২০২০-২১ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মিডফিল্ডারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ গোল করেন পুতেয়াস। চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সের জন্য উয়েফার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় ও মিডফিল্ডারের পুরস্কারও জেতেন তিনি।
সেরা অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবলারের পুরস্কার ‘কোপা অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রি। ১৮ বছর বয়সে সিনিয়র ফুটবলে অভিষেকেই আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। অসাধারণ ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ মৌসুমে বার্সেলোনা ও স্পেনের (ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও টোকিও অলিম্পিকস) হয়ে মোট ৭৩টি ম্যাচ খেলেন, অবিশ্বাস্য!
আর সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ‘ইয়াশিন ট্রফি’ জিতেছেন ইতালির ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জানলুইজি দোন্নারুম্মা। জুন-জুলাইয়ের ইউরোপ সেরার আসরে সেরা গোলরক্ষকও হয়েছিলেন গত জুনে এসি মিলান ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দোন্নারুম্মা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-