ডেস্ক রিপোর্ট •
বদলে যাচ্ছে সাক্ষ্য আইন। দেড়শ বছরের পুরনো এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। এই সংশোধনী চূড়ান্ত হলে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ধারণকৃত ছবি, ভিডিও, অডিও রেকর্ডিং মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের সুযোগ থাকবে।
একইসঙ্গে সাক্ষ্য আইনের একটি বিতর্কিত ধারাও বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারাটি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়।
এছাড়া বেশ কিছু ধারায় সংযোজন ও বিয়োজনের মধ্য দিয়ে আইনটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এই প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারা বাতিল চেয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন সাক্ষ্য আইন সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করেন।
এরপরই বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ ওই রিটের শুনানি ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতুবির আদেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে আইনটি সংশোধন করা হলে তা পরবর্তী ধার্য তারিখে হাইকোর্টকে অবহিত করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোতে মামলা জট বেড়েই চলেছে। এই জট কমাতে বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন দরকার। শুধু বিচার ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করলেই হবে না পুরনো আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই কারণে সরকার সাক্ষ্য আইন যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ওই আইন সংশোধনের একটা খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সেই খসড়ার ওপর স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এরপর খসড়া চূড়ান্ত হলে তা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সাক্ষ্য আইন সংশোধন করে সেখানে ডিজিটাল রেকর্ডকে এভিডেন্স হিসাবে গ্রহণের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এটা করা হলেই যেকোনো অপরাধের ঘটনায় ডিজিটাল রেকর্ড বিশেষ করে অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্র সাক্ষ্য হিবেবে গ্রহণ করে দ্রুত বিচার শেষ করা সম্ভব হবে। শুধু দ্রুত বিচারই নয় তখন মৌখিক সাক্ষ্যের ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে। একইসঙ্গে ঘটনার সঠিক বিবরণ সহজেই আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত, ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে মামলার বিচার পরিচালনায় কীভাবে একজন সাক্ষীর কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা অথবা কি পদ্ধতিতে তা গ্রহণ করা হবে, কোনটি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় বা গ্রহণীয় নয় তা উল্লেখ রয়েছে সাক্ষ্য আইনে।
১৮৭২ সালে প্রণীত এই আইনে মূলত দুই ধরনের সাক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। যা মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে পরিচিত। কিন্তু সেখানে ডিজিটাল রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসাবে অন্তর্ভূক্তির কথা বলা নাই। তবে সাক্ষ্য আইন ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে দায়েরকৃত মামলায় ডিজিাটাল ডিভাইসের মাধ্যমে গৃহীত অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্র সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
এখন সাক্ষ্য আইন সংশোধনের প্রাথমিক খসড়ায় ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ বলতে কোনো ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক, অপটিক্যাল বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বা সিস্টেমকে বোঝানো হয়েছে। সংঘটিত অপরাধের অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্র এসব যন্ত্র ও সিস্টেমের মাধ্যমে রেকর্ড করে তা মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ ফৌজদারি মামলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং দায়রা জজ আদালতসমূহে বিচারাধীন। এসব আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে ডিজিটাল রেকর্ড থাকলেও তা সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণের সুযোগ বিচারকদের নেই। ফলে মৌখিক সাক্ষীর ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু মৌখিক সাক্ষীর গরহাজিরার কারণে বছরের পর বছর ঝুলে থাকে মামলা। বাড়ে মামলার জট। হতাশ হয় বিচারপ্রার্থীরা।
এই মামলা জট ও বিচারপ্রার্থীদের যাতে হতাশা দূর হয় সেই লক্ষ্যে সরকার ১৪৯ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইনে সংশোধনী এনে ডিজিটাল রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-