ডেস্ক রিপোর্ট :
অক্সি-মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আনন্দ-অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে সাময়িককভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগন্যাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন অসাড় হয়ে যায়। এটি মূলত কাজ করে ব্রেইনে। তীব্র ব্যথানাশক হিসেবে ক্যান্সার, হার্ট, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। আগে ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহৃত হতো এখন ওরাল ফর্মে আনা হয়েছে।
কিন্তু দুরারোগ্য রোগীদের কষ্ট ভুলিয়ে দিতে অক্সি-মরফোন ব্যবহার হলেও এটি মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মাদকসেবীরা অক্সি-মরফোন গুঁড়া করে যেকোনো সিরাপ, পানীয়ের সঙ্গে মিক্স করে খাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এই মাদকটি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যুব সমাজ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ মাদকাসক্তরা এটি সেবন করে ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি) রাজধানীর কোতোয়ালি ও ধানমণ্ডি এলাকা থেকে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম মো. আলমগীর সরকার ও জাহিদুল ইসলাম।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার কোতোয়ালি থানার বাবু বাজার এলাকা ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ধানমণ্ডি শাখায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সি-মরফোন বিক্রয় ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়। যা নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স দেখানোর পর পরিবহনের রুট প্রদর্শন করে এবং কার কাছে বিক্রয় করা হবে তা প্রদর্শন করে গ্রহণ এবং বিক্রয় করতে হয়। দেশে অক্সি-মরফোন আমদানি ও বিক্রির জন্য একমাত্র লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
যারা সারা দেশে ১২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এই ১২০টি লাইসেন্সের মধ্যে বরিশালেই রয়েছে ৫০টি লাইসেন্স। আর রাজধানী ঢাকায় রয়েছে মাত্র ২৭টি। বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৫ মাসে ৫ লাখ ডোজ অক্সি-মরফোন বিক্রয় করেছে জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এটি শুধুমাত্র রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন-এর অনুমোদিত পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু মামলাটি তদন্তকালে দেখা গেছে, ইদানীং ওরাল ফরমেটে অক্সি-মরফোন খুচরা বাজারে ব্যাপক হারে বিক্রয় হচ্ছে। যুব সমাজ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অক্সি-মরফোন গুঁড়ো করে যেকোনো সিরাপ বা পানীয়’র সঙ্গে মিশিয়ে মাদক হিসেবে ব্যবহার করছে, যা উদ্বেগের কারণ। কীভাবে অক্সি-মরফোন সারা দেশে ছড়াচ্ছে এ নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ এবং কোতোয়ালি জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-