অন্তঃসত্ত্বা নিপাকে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে ঘাতকরা

ডেস্ক রিপোর্ট :

চাঞ্চল্যকর অন্তঃসত্ত্বা নিপা হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভাগ। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে বেরিয়ে এসেছে লিপা আক্তার নিপার হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি বলেন, বিয়ের পরে পুরনো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ হয় নিপার। সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়লে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় নিপা। একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে নিপাকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যায় আমিরুল। পরবর্তীতে নৌকাযোগে মেঘনা নদীর মাঝে নিপাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। আমিরুলের এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় মোট সাতজন।

গত বছরের ২৬শে এপ্রিল মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পুলিশের সহায়তায় পরিবার নিশ্চিত হয় মরদেহটি লিপা আক্তার নিপার।

নিপার মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমে নরসিংদী সদর থানায় অপমৃত্যুর মামলাও দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে নিপার মা কোহিনূর বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি প্রথমে নৌ-পুলিশ তদন্ত করলেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আমিরুলের বন্ধু সুজন মিয়া ও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। প্রধান আসামি আমিরুল পলাতক রয়েছেন। বাকি চারজন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। গ্রেপ্তারকৃত দু’জন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে বলা হয়, আমিরুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিরুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেননি। এ সময় কৌশলে নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন তিনি। এক বছর সংসার করার পর সেখানে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

একপর্যায়ে আমিনুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীতের প্রেমের কাহিনী বলে দেয়। এতে নিপার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেন। এদিকে নিপার সঙ্গে আমিরুলের নতুন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে, এটি সম্ভব হবে না বলে জানান চিকিৎসক। সে সময় নিপা চার থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
পরে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এরমধ্যে আমিরুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪শে এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং কাঠ দিয়ে এলোপাতারি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

এসপি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও লাশটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় জড়িতরা।

পরে নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই।

এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে নানা ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখীন হয় তার পরিবার। পরে আদালতে নিপার মা কোহিনূর বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। প্রধান অভিযুক্ত আমিরুল বিদেশে পলাতক বলে জানা গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও খবর