কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি!

বিশেষ প্রতিবেদক :

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুই মাসে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ঝিলংজা ও সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫ জন। এতে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২জন।

ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেছেন অপরাধীদের দ্র‍ুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

গত দুই মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ১২ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। এতে দুইজন নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হলেও ১০ জন পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন নিহতের ভাই ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরত উল্লাহ সিকদার।

সোমবার (৮ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউপির তোতকখালীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন মেম্বর প্রার্থী রেজাউল করিম।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। ২৩ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলায় নিহত হয়েছেন ৬ জন, ৩ সেপ্টম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিহত হয়েছে এক গৃহবধু। গত ২০ সেপ্টম্বর নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপে আবদুল হালিম ও মহেশখালীর কুতুবজুমের আবুল কালাম।

এছাড়াও গত ১৯ অক্টোবর কালারমারছড়ায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে রুহুল কাদের ও ৫ নভেম্বর নিহত একই কায়দায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন আলা উদ্দিন। ২৭ অক্টোবর অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে গুরতর আহত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোনাফ সিকদারসহ ২ জন।

এদিকে হঠাৎ করে কক্সবাজারের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ও অধিকাংশ হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, অধিকাংশই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এসব টার্গেট কিলিং ঠেকানো প্রশাসনের জন্য অনেকটা দুরহ।

কক্সবাজারে হঠাৎ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগজনক। যারা বিগত সময়ে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পন করেছে তারাও হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে হবে। না হয় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।

জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেখানে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতিকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে এতে আমরা উদ্বিগ্ন। এতে দুর্বল পুলিশিং অনেকটা দায়ী। বর্তমানে কক্সবাজারে কর্মরত অধিকাংশ পুলিশ বিভিন্ন এলাকা সম্পর্কে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই।
সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে। এছাড়া সরকারী দলের নেতাকর্মীদের বিভক্তির কারণেও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা কালারমারছড়ার ফজলুল আজিম মোঃ সিগবাত উল্লাহ জানিয়েছেন, কালারমারছড়ায় ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।

আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে খুনের ঘটনা ঘটছে। এতে নির্বাচনে যারা বাধা হয়ে বাড়াবে তাদেরকে মামলায় আসামী করে দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঘটনা করে দুইজন এতে আসামী করে ৩০/৩৫ জন।

৫ নভেম্বর নিহত আলাউদ্দিন এর জানাযায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসব হত্যাকান্ডের যোগানদাতাকে প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপরও প্রশাসন নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল হাই জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না তারা কোন ভাবেই হয়রানির শিকার হবে না।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এসব ঘটনায় যারা জাড়িত তাদের যেভাবেই হোক আইনের আওতায় আনা হবে। কোন সন্ত্রাসী রেহাই পাবে না।

আরও খবর