রামগড় :
‘হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে/ যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়/ শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়..।’ জনপ্রিয় এ চাকমা গানের অর্থ হলো, ‘পাহাড়ি মেয়েটি জুমে যায় রে, যেতে যেতে পথে পথে পিছন ফিরে চায়, পাকা শস্য দেখে তার বুকটা জুড়ায়।’ সত্যি সত্যিই বুক জুড়িয়ে যাচ্ছে।
পাহাড়ের উঁচু-নিচু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা ধানের গুচ্ছ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন পাহাড়ের সবুজে গাঢ় সোনা রঙ ঢেলে দিয়েছে। পাহাড়ের পর পাহাড়ে এখন জুমের ফসল তোলার ধুম। পাকা ধানের ম ম গন্ধে করছে চারদিক। ফসল পাওয়ার খুশিতে ভরে উঠেছে পাহাড়ি মানুষের জীবন।
এ বছর তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বাম্পার ফলন হয়েছে জুমের। তাই পাহাড়ের কোলে অনাদিকালের জীবনধারায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জুমিয়া পরিবারগুলোতে খুশির সীমা নেই। স্থানীয় জুম চাষি চামপয় ম্রো বলেন, তিন পাতিল (এক পাতিলে ১০ কেজি) বীজধানে গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো ছিল। এবার ছেলেমেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসারে সারা বছরের খোরাকির ধান পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
শুধু ধান কাটা নয়, ধুম পড়েছে মারফা (পাহাড়ি শস্য), ছিনারগুলা (পাহাড়ি মিষ্টি ফল), বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাঁকরোল, কুমড়াসহ নানান ফসল তোলার। এরপর ঘরে উঠবে তিল এবং যব। সবশেষে ঘরে উঠবে তুলা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের আয়ের প্রধান উৎস হলো জুম চাষ। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু ফসল তারা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের ব্যয় মিটিয়ে থাকেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় মোট জুমিয়া কৃষকের সংখ্যা ৪২ হাজার ৯৩৭ জন। তার মধ্যে বান্দরবানে ১৫ হাজার ৪৮ জন, খাগড়াছড়িতে ৪ হাজার ৩৯০ জন এবং রাঙামাটিতে ২৩ হাজার ৪৯৯ জন। এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় ১৫ হাজার ৯৯০ হেক্টর টিলাভূমিতে জুম চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বান্দরবান জেলায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর ভূমিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-