আতঙ্ক কেটেছে, স্বাভাবিক হয়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের পরিবেশ

প্রথম আলো •

হত্যাচেষ্টা মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রকে আসামি করা নিয়ে গত দুই দিন উত্তপ্ত ছিল শহর। প্রথম দিনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিনে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকসহ সাধারণ মানুষেরা। জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে এখন কোনো কর্মসূচি নেই। নেই কোনো আতঙ্ক, সবকিছুই এখন স্বাভাবিক। পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে সৈকতে ঘুরছেন, কেউ কেউ মেরিন ড্রাইভ ধরে ছুটছেন টেকনাফে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত রোববার বিকেলে মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোকজন রাস্তায় নেমে পড়েন এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় দোকানপাটও বন্ধ ছিল। বহু পর্যটক ওই দিন রাতে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফিরে গেছেন।

আবুল কাশেম বলেন, আজ সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পর্যটকেরা যাঁর যখন ইচ্ছা টেকনাফ, মহেশখালী, রামু, চকরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে এখন কোনো আতঙ্ক নেই। কিছুদিন পর সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে প্রমোদতরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে পর্যটকের আগমন আরও বেড়ে যাবে। আজ শহরের হোটেল–মোটেলে অবস্থান করছেন ৩০ হাজারের বেশি পর্যটক।

আজ সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা গেছে, কয়েক শ পর্যটক পানিতে নেমে গোসল করছেন। উত্তর দিকের সিগাল, সুগন্ধা পয়েন্টেও কয়েক শ পর্যটক গোসলে নেমে আনন্দ–উল্লাসে মেতে ওঠেন। কেউ কেউ বালুচরে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।

সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার সুত্রাপুর থেকে ভ্রমণে আসা স্কুলশিক্ষক আরেফা আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের চার সদস্য নিয়ে তিনি গত শনিবার সকালে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। কিন্তু রোববার বিকেলে হঠাৎ সড়ক অবরোধ হওয়ায় তিনি মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ ভ্রমণে যেতে পারেননি। আতঙ্কে গতকাল সোমবারও হোটেল থেকে বের হননি। আজ বিকেলে টেকনাফ ভ্রমণ করবেন। রাতের বাসে ঢাকায় ফেরার টিকিট করেছেন।

রাজশাহী থেকে ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, পর্যটন এলাকায় মানুষ আসেন নিরাপদ ভ্রমণের জন্য, আনন্দ উপভোগের জন্য। সেখানে হঠাৎ করে আন্দোলন, ধর্মঘট চলতে থাকলে আতঙ্ক বাড়ে। আর যেখানে আতঙ্ক থাকে, সেখানে মানুষ যাবে কেন?

রোববার বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন শহরের পেশকারপাড়ার বাসিন্দা মো. শাহজাহান। গত ২৭ অক্টোবর রাতে তাঁর ছোট ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোনাফ সিকদার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে শুঁটকি মার্কেটে গেলে গুলি করে দুবৃত্তরা। মোনাফ সিকদার বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুলির ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে মেয়র মুজিবুর রহমানকে আসামি করা হয়।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভার ময়লার গাড়ি আড়াআড়িভাবে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়

ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পুরো শহর অচল করে রাখা হয়। মুজিবুরের সমর্থক ও দলীয় নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে প্রধান সড়কের দুই পাশের দোকানপাট বন্ধ করা হয়। সন্ধ্যার পর সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লা গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে রাত ১০টার পর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আরও খবর