মনোনয়নের জন্য ‘নাম প্রস্তাব বাণিজ্য’ তৃণমূলে

ইত্তেফাক •

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত একশ্রেণির নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে অনেক জায়গা থেকে নাম প্রস্তাবের তালিকায় বিতর্কিত ব্যক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের পুত্র-নাতি, শিবির ক্যাডার, হত্যা মামলার আসামি, ভূমিদস্যু ও বিএনপির সাবেক নেতাদের নাম এসেছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল থেকে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের নাম পাঠানোর নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড তৃণমূলের প্রস্তাবকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দল মনোনীত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করছে। তাই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিতর্কিতরা মনোনয়নও পেয়ে গেছেন। এতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের ক্ষোভ বাড়ছে। রাজাকারের পুত্রের নৌকার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে একটি ইউনিয়নের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।

যে কোনো নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলে জয় নিশ্চিত-এমন একটা মনোভাব আছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। মাঠে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছে। সে কারণে যে কোনোভাবে নৌকা পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর এ সুযোগে তৃণমূলে গড়ে উঠেছে মনোনয়ন-বাণিজ্য সিন্ডিকেট।

আর এই সিন্ডিকেটকে কাজে লাগিয়েছেন বিরোধী মতাদর্শীসহ বিতর্কিত নেতারা। ‘যাকে যেভাবে হাত করা দরকার’—এই প্রতিশ্রুতি এবং মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একশ্রেণির নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন থেকে। অনেক ক্ষেত্রেই নৌকা বাগিয়ে নিচ্ছেন স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান, বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগাররা।

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এমন অভিযোগ আছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, বিতর্কিতরা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জেলা ও কেন্দ্রীয় একশ্রেণির নেতাদের ম্যানেজ করেছেন। এ কারণে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সঠিক সত্য যাচ্ছে না।

কোনো কোনো ইউপিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের একক প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিরোধী মতাদর্শীদের হাতে নৌকা দেওয়ার অনেক অভিযোগ দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়েছে। কিছু কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্বিতীয় ধাপের ১৫টির মতো ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ পড়েছে তার অধিকাংশই সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দপ্তর সেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা তারপর জেলা হয়ে কেন্দ্রে নামের সুপারিশ আসে। তৃণমূলে নাম তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোনোরূপ স্বজনপ্রীতি ও লোভের বশবর্তী না হয়ে এবং প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য গোপন না করে নাম পাঠানোর জন্য দলীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তারপরও কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু স্থানে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জের ধলবাড়ীয়া ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন গাজী শওকত হোসেন। তাকে রাজাকারের পুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মনোনয়ন বাতিলের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন ইউনিয়নটির দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। রবিবার দলের ইউনিয়ন কার্যালয়ে মানববন্ধনে নেতাকর্মীরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ধলবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাপস মণ্ডল, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুবক্কর গাইন, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘরামি, সম্পাদক সুদার্শন সরকার, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শেখ আমিনুর রহমান প্রমুখ।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কুষ্টিয়ার মিরপুরের পোড়াদহ ইউনিয়ন এবং মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রাজাকারের সন্তানদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী করায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে যশোরের বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়নে শান্তি কমিটির সভাপতির ছেলে নৌকা প্রতীক পাওয়ায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকারের পুত্র মনোনয়ন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আরও খবর