অনলাইন ডেস্ক •
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষুদ্র ঋণ ও বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করতে আবারও উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর (আরপিও) এ সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমিশনাররা। সোমবার কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সরকারি সেবা খাতের বিল এবং ক্ষুদ্রঋণ খেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার অযোগ্যতার বিধানে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে খেলাপি ঋণ ও বিল পরিশোধের শর্ত পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাত দিন নয় আগের দিন পরিশোধ করলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের প্রতিটি পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার সময় ১০ বছর বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এসব সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, অনেকটা আকস্মিকভাবে সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আরপিওতে কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। প্রথা ভেঙে ইসির বেশির ভাগ যুগ্ম-সচিবকে এ সভায় ডাকা হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার আরেকটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় আরপিও সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদন করে তা পাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এ ধরনের সংশোধনীর উদ্যোগ নতুন সমালোচনা তৈরি করবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঋণ ও বিল খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে আরপিওতে শর্ত রাখা হয়েছিল। পরে খেলাপিদের সুযোগ দিতে এ শর্ত শিথিল করে করা হয়। এখন আরও সুযোগ দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পরিশোধের বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এতে ঋণ ও বিল খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য করার যে নীতি নেওয়া হয়েছিল তা থেকে সরে আসা হচ্ছে।
সাবেক এ কমিশনার বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ শর্ত আরপিওতে যুক্ত করেছিলাম। বর্তমান কমিশন কার সঙ্গে আলোচনা করে বারবার এ শর্ত শিথিল করছে? মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে কেনইবা এ সংশোধনীর প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
বড় ঋণ খেলাপিদের সুযোগের সঙ্গে ছোট ঋণ বা সেবা খাতের বিল খেলাপিদের সামঞ্জস্য রাখতে আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শিল্প, যৌথ কোম্পানির পরিচালক বা বড় ঋণ গ্রহিতারা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন খেলাপি টাকা পরিশোধ করলে প্রার্থী হতে পারেন। অথচ ছোট ঋণ গ্রহিতা বা বিল খেলাপিদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে তা পরিশোধের বিধান রয়েছে আরপিওতে। এই অসঙ্গতি দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ সংশোধনীর প্রস্তাব আগেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তখন এসব সংশোধন না হওয়ায় আবারও পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার সময় ১০ বছর বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, বাস্তবতার আলোকেই এ প্রস্তাব করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৮ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের ছয় মাস মধ্যে কেউ ঋণ বা বিল খেলাপি হলে তিনি প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হতেন। পরে তা সংশোধন করে ছয় মাস থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়। এরপর আবার সংশোধনী এনে সাত দিন। এখন আগের দিন পরিশোধ করলেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এসব সংশোধনীর যৌক্তিকতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ খেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হয়। ওই সময় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করলে প্রার্থিতা বাতিল হবে-এমন শর্ত সংশোধন করা হয়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলেই প্রার্থী বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ক্ষুদ্র ঋণ এবং টেলিফোন, বিদ্যুৎ, পানি ও সেবা খাতের বিল খেলাপিদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে তা পরিশোধ না করলে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিধান থেকে যায়। এবার তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হলো।
জানা গেছে, আরপিওর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত ধারা ১২(১) এ এসব সংশোধনী আনা হচ্ছে। ১২(১) অনুচ্ছেদের ‘ঠ’ সংশোধন করে কৃষি খাতে নেওয়া খেলাপি ক্ষুদ্র ঋণ এবং ‘ড’ সংশোধন করে সরকারি সেবা খাতের খেলাপি বিল পরিশোধের পরদিনই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ১২(৩ক)(গ) অনুচ্ছেদে ১২ ডিজিটের টিআইএনের সনদের কপি প্রার্থী হওয়ার সময় জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া অন্য সব নির্বাচনের আইনে টিআইএনের সনদের কপি জমা দেওয়া বাধ্যমূলক রয়েছে। এ ছাড়া আরপিওর ২৭(১) ধারায় প্রতিবন্ধী ও বয়স ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরপিওর ৯০(খ)(১) ধারা সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিটি কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার শর্ত পূরণের সময়সীমা ২০৩০ করার প্রস্তাব করছে ইসি। কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এ শর্ত পূরণ করতে সক্ষম না হওয়ায় এ ধারা সংশোধনী প্রাথমিক অনুমোদন করেছে ইসি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনছে ইসি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-