রামুতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জাহাজ ভাসা উৎসবে সম্প্রীতির মিলনমেলা

সাজন বড়ুয়া সাজু •

 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজারের রামুতে বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হল হাজার বছরের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ‘সম্প্রীতির জাহাজ ভাসা উৎসব।

মূলত প্রবারণা পূর্ণিমার পরের দিনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।তারই ধারাবাহিতায় আজ ফানুসের আলোয় বিদূরিত হউক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’এমন স্লোগানে জাহাজ ভাসানোর আয়োজন করা হয়।

রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইনপাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট আটটি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে। সাত-আটটি নৌকার ওপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্পজাহাজ।

ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে জাহাজের ওপরে শিশু-কিশোর ও যুবকেরা নেচে গিয়ে মেতেছিল অন্যরকম আনন্দে। জাহাজ নিয়ে ভেসে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন-নাচসহ নানা আয়োজনে।

জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডালিম বড়ুয়া বলেন রামুবাসীর ইতিহাস সম্প্রতির ইতিহাস তারই ফলস্বরুপ সবধর্মের মানুষের আজ জাহাজ ভাসা উৎসবে সমাগম
ওয়াল্ড বুড্ডিস্ট এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক রজত বড়ুয়া রিকু বলেন জাহাজ ভাসা উৎসব ঘিরে কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আন্তরিকতার সাথে জাহাজ ভাসা উৎসব পালন করার জন্য সাহায্য করে যাচ্ছে এছাড়া সাথে রাজনৈতিক ব্যাক্তিরাও কাজ করছে।

প্রায় ২শত বছর আগে রাখাইন রাজা মংরাজের রাজত্ব কালে রামুতে এই জাহাজ ভাসা উৎসব শুরু হয় সেই থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা এই উৎসব পালন করে আসছে এবং এটি বৌদ্ধিক চর্চার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এমনটাই বললেন জাহাজ ভাসা উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী জ্যোতিরময় বড়ুয়া রিগ্যান।

এছাড়া অনেক সময় ধর্মান্ধ মানুষের উগ্রচেতনা থেকে একজনের প্রতি আরেকজনের সম্প্রতি চেতনা জাগ্রত এবং জগতের সকল প্রাণী সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা করছে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্রীমৎ শীলমিত্র মহাথের।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও) প্রণয় চাকমা বলেন, এ জাহাজ ভাসা উৎসব ঘিরে কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। যা সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও সকল ধর্মের মানুষের যে উপস্থিতি তা থেকে বার্তা পায় যে যে যার যার ধর্ম পালন করার পাশাপাশি কেউ কারও ধর্মকে আঘান না হেনে সম্প্রীতির বাংলাদেশ এখান থেকে শিক্ষা পায় এমনটা মনে করছে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

কোনো সম্প্রীতির ঘাটতি না ঘটে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে অনুষ্ঠানে আগত পুণ্যার্থীরা এছাড়া সাম্প্রতিক কর্মযজ্ঞ ভুলে মানুষের তরে মানুষ এমনটাও আশাবাদী।

আরও খবর