বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় পূজামণ্ডপ ও হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নয়জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
দুর্গা পূজার মধ্যে কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাছারী মুরা শীলপাড়া পূজামণ্ডপ ও মগনামায় হামলার ঘটনা ঘটে বলে পেকুয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান।
তিনি বলেন, “পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়ায় কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে একদল দুর্বৃত্ত মিছিল নিয়ে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীর সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলাকারীরা গুলি ছুড়ে।
“পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশসহ অন্তত ৭/৮ জন আহত হয়। হামলাকারীরা গেটের সামান্য কিছু অংশ ভাঙচুর করলেও মূল পূজামণ্ডপের ক্ষতি সাধন করতে পারেনি।”
ওসি বলেন, পেকুয়া সদরের ঘটনার পর আরও কয়েকটি জায়গায় ‘দুর্বৃত্তরা’ খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। তারা শিলখালী ইউনিয়নের কাছারী মুরা শীল পাড়া পূজামণ্ডপে এবং মগনামায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে।
হামলার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নয়জনকে আটক করা হয় বলে জানান ওসি।তবে আটকদের নাম তিনি বলেননি।
বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা চলার মধ্যেই বুধবার সকালে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে চাঁদপুরেও পূজা মণ্ডপে ভাংচুর ও সংঘর্ষ হয়, সেখানে প্রাণহানিও ঘটে। মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জেও।
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার সুশীল বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলায় পেকুয়া সদরের বিশ্বাসপাড়া পূজামণ্ডপের গেটসহ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া শিলখালী ইউনিয়নের শীল পাড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার হলেও স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত ইসলামের কর্মীরা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে সরকারবিরোধীরা এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
পূজামণ্ডপে হামলা ও হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-