ফেসবুকের ইতিহাসে এটাই কোনো বড় আউটেজ যেটা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ ঘণ্টা (বাংলাদেশ সময় ৪ অক্টোবর রাত ৯. ১৫ মিনিট থেকে ৫ অক্টোবর মধ্যরাত ৩.৩০ পর্যন্ত) ফেসবুকসহ ফেসবুকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এর সেবা বন্ধ ছিল।
ফেসবুক ডাউন থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে তবে সেটা বিশেষ কিছু লোকেশন কিংবা কিছু কিছু দেশের ক্ষেত্রে। তবে এবারই প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল যেখানে ফেসবুকের হেডকোয়ার্টারেও সব সেবা বন্ধ ছিল এমনকি ফেসবুকের কর্মীরা যারা অনলাইনে ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করেন তারাও লগইন হতে পারেননি।
যাই হোক, এখন সবার প্রশ্ন ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছিল?
এর মূল কারণ ছিল ফেসবুকের DNS (Domain Name System) সিস্টেম এর সমস্যা। সাধারণত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করে কতগুলো আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) এর উপর ভিত্তি করে অর্থ্যাৎ একটি কম্পিউটার যখন অন্য একটি কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তখন একে অপরকে চিনে থাকে আইপি এড্রেসের মাধ্যমে।
একইভাবে আমরা যখন ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইট কিংবা সার্ভারে প্রবেশ করি তখন মূলত উক্ত সার্ভারে প্রবেশ করি তার নির্ধারিত আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। প্রত্যেকটা সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট ইন্টারনেট আইপি থাকে যেটা হয় ইউনিক (মোবাইল নাম্বারের মতো, অন্য কারও সাথে মিলবে না)। যেমন ফেসবুকের অনেকগুলো আইপির মধ্যে একটি হলো-63.69.176.13, কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এত আইপি এড্রেস কখনোই মনে রাখা সম্ভব নয়, তাই এর সহজ সমাধানে ব্যবহৃত হয় DNS (Domain Name System) যার কাজ হচ্ছে আইপি এড্রেসকে নাম এ কনভার্ট করা।
উদাহরণ হিসেবে আমরা যখন facebook.com লিখি তখন এই DNS প্রযুক্তি প্রথমে খুঁজে বের করে Facebook.com এর সার্ভারের আইপি এড্রেস কি, তারপর facebook.com আর উক্ত সার্ভার আইপি এড্রেসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে আমাদেরকে সার্ভার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, ঠিক একইভাবে আমরা যখনই কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, আমাদেরকে কষ্ট করে আইপি মনে রাখতে হয় না শুধু ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা মনে রাখলেই হয়।
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে ফেসবুকের DNS সমস্যা হলে whatsapp আর instagram এও কেন এর প্রভাব পড়বে? এর উত্তর হলো- facebook, instagram & whatsapp এদের সবার ডাটাই থাকে একটি সার্ভার সিস্টেমে এবং ব্যাকইন্ডে ডাটাবেস কানেক্টিভিটি এর ক্ষেত্রে সবাই ফেসবুকের DNS সিস্টেম (facebook.com) ব্যবহার করে, তাই ফেসবুকের DNS সমস্যা হওয়াতে বাকিদেরও হয়েছে।
এদিকে, সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে ব্যবহারে ব্যাহত হওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন মার্ক জাকারবার্গ।
তিনি বলেন, আজকের এই বিভ্রাটের জন্য আমি দুঃখিত। আমি জানি যে যাদের প্রতি আপনি যত্নশীল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে এসব পরিষেবার ওপর আপনারা কতটা নির্ভরশীল।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ৯টার কিছু সময় পর থেকে এসব যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বার্তা আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন বিশ্বজুড়ে লাখো ব্যবহাকারী। রাত সাড়ে চারটার দিকে এই টুইট বার্তায় সার্ভার সচল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ আবার অনলাইনে ফিরে এসেছে।
মঙ্গলবার সকালে এক টুইটপোস্টে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, আজ যারা আমারদের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেননি, তাদের সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কাজ করতে শুরু করেছে। ধৈর্য ধরার জন্য আপনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এ নিয়ে সবাইকে হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিভ্রাটের খবরে ফেসবুকের শেয়ারের দর সোমবার এক ধাক্কায় সাড়ে ৫ শতাংশ পড়ে গেছে। প্রায় এক বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বাজে দিনটি পার করছে সামাজিকমাধ্যমটি।
আর ইনডিপেনডেন্ট বলছে, ফেসবুকের ইতিহাসে এতো বড় মাত্রায় বিভ্রাটের ঘটনা একেবারেই বিরল। তবে এসব ক্ষেত্রে ফেসবুক সাধারণত খুব একটা তথ্য প্রকাশ করে না, মুখে কুলুপ এঁটে থাকে।
২০১৯ সালেও বড় পরিসরে যান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছিল তারা। তখন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে গিয়ে ওই সমস্যা দেখা হয়েছিল। ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেনের মার্কিন সিনেটে সাক্ষ্য দেওয়ার নির্ধারিত তারিখের ঠিক আগের দিন এই বিভ্রাটে পড়ল এ কোম্পানির সেবাগুলো।
হাউগেনের হাত দিয়ে ফাঁস হওয়া ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথির কারণে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি মার্কিন সিনেটের তদন্তের মুখে পড়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী এখন ২৯০ কোটি। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী এই পরিমাণ অ্যাকাউন্ট থেকে মাসে একবার হলেও সামাজিকমাধ্যমটিতে লগইন করা হয়। এই ব্যবহারকারীদের চার কোটি ৮০ লাখের বাস বাংলাদেশে। অপরদিকে বিশ্বব্যাপী ১২০ কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-