কিয়ামত সংঘটিত হবে। অমোঘ সত্য ও অনিবার্য এক বাস্তবতা। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাবৎ সৃষ্টিজগৎ তছনছ করে দেবেন। ধ্বংস করে দেবেন সবকিছু। সেদিন শুধু তিনি থাকবেন, বাকি সবকিছু তার মহা পরাক্রমশীলতায় বিনাশ হয়ে যাবে। তিনি নিজে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে আবার নিজে উত্তর দেবেন।
কিয়ামত শেষে সবাইকে উপস্থিত করা হবে। সেদিন যে মাঠে সমাবেশ ঘটবে, তাকে বলা হয় ময়দানে মাহশার বা সমাবেশের স্থল। পরকালে বিচারের জন্য কবর থেকে উত্থিত হয়ে সব প্রাণী এ মাঠে দণ্ডায়মান থাকবে। পৃথিবীই হবে হাশরের মাঠ। হাদিসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর রয়েছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ০৮)
সেদিন আকাশ-জমিন বদলে যাবে
কেয়ামতের দিন সবকিছু কেমন পরিবর্তন করা হবে, সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে দিন পরিবর্তিত করা হবে— এ জমিনকে অন্য জমিনে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমানগুলোকে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪৮)
পৃথিবী ও আকাশ পাল্টে দেওয়ার এরূপ অর্থও হতে পারে যে, তাদের আকার ও আকৃতি পাল্টে দেওয়া হবে। যেমন- কোরআনুল কারিমের অন্যান্য আয়াত ও হাদিসে আছে যে, সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকে একটি সমতল ভূমিতে পরিণত করে দেওয়া হবে। এতে কোনো গৃহের ও বৃক্ষের আড়াল থাকবে না। পাহাড়, টিলা, গর্ত, গভীরতা কিছুই থাকবে না।
এ অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(বিচার দিবসে) আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মসৃণ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে, তুমি তাতে কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১০৬-১০৭)
যেমন ভূমিতে সবাইকে একত্রিত করা হবে
সাহল ইবনে সাদ সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন সকল মানুষকে একটি চেপটা গোলাকার স্বচ্ছ রুটির ন্যায় (সমতল এবং কিছুটা লালাভ বর্ণের) শুভ্র ভূমিতে একত্রিত করা হবে।” (মুসলিম, হাদিস : ২৭৯০)
কেয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৩)
হাশরের ময়দানে কে সুপারিশ করবে
হাশরের ময়দানে একটু সুপারিশের জন্য সবাই একে অন্যের কাছে ঘুরবে। হাদিস শরিফে এসেছে—
হাশরের ময়দানে মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর কাছে গিয়ে বলবে, আপনার সন্তানদের জন্য সুপারিশ করুন, তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাও, কারণ তিনি আল্লাহর বন্ধু। অতঃপর মানুষ ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুসা (আ.)-এর কাছে যাও।
কারণ তিনি কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। অতঃপর তারা মুসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি রুহুল্লাহ। অতঃপর মানুষ তাঁর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। অতঃপর মানুষ তার কাছে আসবে, তিনি তখন বলবেন, হ্যাঁ, আমি এর যোগ্য, আমি সুপারিশ করব।
(কুরতুবি, ১০ম খণ্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা)
কেয়ামতের দিন মহানবী (সা.) হবেন আদমসন্তানের নেতা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে আমি হব আদমসন্তানের নেতা। এ জন্য আমার কোনো গর্ব নেই, আমার হাতে থাকবে প্রশংসার পতাকা, এ জন্য আমি গর্বিত নই। আদম (আ.)-সহ সব নবী আমার পতাকার নিচে থাকবেন।’ (কুরতুবি, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৭)
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-