রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার •
সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে টেকনাফে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে নৌকা জয় পেয়েছে মাত্র একটিতে। তাও পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজে। বদির জন্মস্থান টেকনাফ সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রার্থী আবু সৈয়দের অবস্থান তৃতীয়। তাও স্বল্প সংখ্যক ভোটে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় চলছে। নৌকার এই পরিনতির জন্য সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীদের একটি অংশ। তাদের মতে, মাই ম্যান না হলে বদি কোন প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেন না। বরং প্রার্থীদের ডুবানোর জন্য কলকাঠি নাড়েন। টেকনাফেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদ্য আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত জাফর আলম বদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান সদর ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন।
পিতা জাফর আলম পুত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঘনিষ্ঠতার কারণে বদিও এদের বিপক্ষে যেতে পারেনি। পরোক্ষ ভাবে বদি বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজাহানের পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একিভাবে টেকনাফের রাজনীতিতে শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী সোনা আলী বরাবরই বদির অপছন্দের তালিকায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ কারণে বদি আওয়ামীলীগের জেলা টিমের সাথে প্রকাশ্য দু-একটি সভা সমাবেশে উপস্থিত হলেও তার ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না সোনা আলীর পরিবার।
একমাত্র হ্নীলা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রাসেদ মোহাম্মদ আলী জয়ী হয়েছে। রাসেদ মোহাম্মদ আলী সাবেক এমপি প্রয়াত অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র। পারিবারিক ও সামাজিক ইমেজের উপর ভর করে জয়ী হয়েছেন তিনি।
হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে পেছনে ফেলে বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন জামায়াত ইসলামীর জেলা আমীর মৌলানা নুর আহম্মদ আনোয়ারী।
টেকনাফে আবদুর রহমান বদি জনপ্রিয় এ ধরনের প্রচারণা সারাদেশে। কিন্তু তার জন্ম এলাকায় নৌকার এমন শোচনীয় অবস্থা দেখে তাকে নিয়ে কড়া সমালোচনায় মেতে উঠেছে নেতাকর্মীরা।
আবার প্রার্থী নির্বাচনে জেলা নেতাদের অদুরদর্শীতাকে দায়ী করেছেন অনেকে। তাদের দাবী, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আগন্তুক, বিতর্কিত, অজনপ্রিয়দের নাম পাঠান শীর্ষ নেতারা। এতে প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা মনোনয়ন দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন। ফলে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।
টেকনাফ উপজেলার চার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ফলাফলে সাবরাং ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর হোসেন (আনারস), হ্নীলা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদ মো. আলী (নৌকা), টেকনাফ সদর ইউনিয়নে জিয়াউর রহমান জিহাদ (মোটরসাইকেল) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
সাবরাং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের নূর হোসেন ১৪ হাজার ৭৪৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সোনা আলী পেয়েছেন ৯ হাজার ৮৭১ ভোট।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীকের জিয়াউর রহমান জিহাদ ৯ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের শাহজাহান মিয়া পেয়েছেন সাত হাজার ৯৫২ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে সৈয়দ আলম পেয়েছেন ১৮৬৭ ভোট।
এছাড়া হ্নীলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের রাশেদ মো. আলী ১০ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসন শোভন সাত হাজার ২৭৩ ভোট পেয়েছেন।
তবে হোয়াইক্যং ইউনিয়নে দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। ওই ইউনিয়নে জামায়াত নেতা নুর আহম্মদ আনোয়ারী এগিয়ে রয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী (চশমা) ৯ কেন্দ্রে পেয়েছেন ৯৮২১ ভোট। নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের আজিজুল হকের প্রাপ্ত ভোট ৭৪৩৮। মোট ভোটার ১৯০৮৬। কাস্ট হয়েছে ১৯৫৫৫ ভোট। বাতিল ভোট ৪৬৯টি।
স্থগিত দুইটি কেন্দ্রে ৪৪২৫ ভোট রয়েছে। সেখানে উনচিপ্রাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪৯৩ ভোট এবং লম্বাবিল এমদাদিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে ১৯৩২ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজিজুল হকের চেয়ে অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী ৯ কেন্দ্রের ফলাফলে ২৩৮৩ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে হলে মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারীকে স্থগিত দুই কেন্দ্রে আরো ২০৪৩ ভোট পেতে হবে।
এদিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা মোকাবেলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বেদারুল ইসলাম।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-