প্রস্তুত হচ্ছে সেন্টমার্টিন, বেহাল জেটি বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা

সায়ীদ আলমগীর, জাগোনিউজ •

চলছে শরৎকাল। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে শারদ-স্নিগ্ধতা। ধীরে শান্ত হয়ে আসছে নীল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। কিছুদিন পরই প্রকৃতিতে হেমন্তের পাতাঝরা গান বেজে উঠবে, সে পথেই আসবে কুয়াশা মোড়ানো শীত। শীতের আবহ শুরুর মধ্য দিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো।

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক পর্যটন বছর। এ মুহূর্তে সে প্রস্তুতিতেই সময় পার করছেন কক্সবাজারের পর্যটনসেবীরা।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের ভ্রমণের আরাধ্য স্থান প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। বরাবরের মতো এ দ্বীপে পর্যটক আনা-নেওয়া করতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ নামানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামতে স্থাপিত একমাত্র জেটির বেহাল দশায় এ বছর এখানে পর্যটকদের যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবহেলায় ভাঙছে দ্বীপের চারপাশ। সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানও। দ্বীপবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

jagonews24

বিজ্ঞাপন

সেন্টমার্টিন নৌরুটে চালানো একাধিক জাহাজের পরিচালক পর্যটন উদ্যোক্তা তোফায়েল আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, গত ক’বছরে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে সেন্টমার্টিন জেটির অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পন্টুন। সবশেষ গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেটিটি আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি জেটির পাশে ট্রলার ভেড়ানোর অংশ পর্যন্ত ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় জেটিটি অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী এখন।

অন্যদিকে দ্বীপ ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছেন। হেমন্ত, শীত ও বসন্ত- এ তিন ঋতু সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটনের জন্য ভরা মৌসুম। ফলে হেমন্তের আগমন বার্তায় মৌসুম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে বেহাল জেটির কারণে বিনিয়োগকারীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বাঁচাতে রক্ষা বাঁধসহ বিধ্বস্ত জেটিটি অবিলম্বে সংস্কার জরুরি বলে মনে করছেন তারা। অন্যথায় পর্যটন খাতে জড়িত অন্তত অর্ধলাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান অচিরেই ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

jagonews24

জেটি সংস্কারের দাবিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পদক্ষেপ বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারে ৮-১০টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, শতাধিক মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ ট্যুরিস্ট গাইড এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অন্তত ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সেন্টমার্টিনকে ঘিরে পরিচালিত হয়। এসব কর্মকাণ্ডের একমাত্র মাধ্যম সেন্টমার্টিন জেটি। অনেক দিন জেটির সংস্কার নেই। কিন্তু দ্বীপের প্রবেশদ্বার জেটি ছাড়া দ্বীপ একেবারে অচল। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জেটির মেরামত করা না গেলে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে এ খাতে সম্পৃক্ত অর্ধলক্ষ মানুষ।

দ্বীপের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিরাট একটা অংশ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান। তাদের জন্য দ্বীপে গড়ে উঠেছে দুশর বেশি হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ। রয়েছে শতাধিক রেস্তোরাঁ। শীত মৌসুমে দ্বীপবাসীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের একমাত্র আয়ের উৎস পর্যটন। এ খাতকে পুঁজি করে প্রচুর বিনিয়োগও রয়েছে। বছরে মাত্র পাঁচ-ছয় মাস ব্যবসার আয়ের টাকায় ১২ মাস চলেন দ্বীপের বাসিন্দা ও উদ্যোক্তারা। জেটিটি দ্রুত সময়ে সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাবে আয়ের প্রায় সব উৎস।

jagonews24

ওই সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার উপদেষ্টা এমএ হাসিব বাদল, এসএম কিবরিয়া খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তোহা, সহ-সভাপতি ইফতিকার আহমদ চৌধুরী, এসএ কাজল, নুরুল আলম রনি ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. আল-আমীন বিশ্বাস তুষার। পর্যটন ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ছিলেন সাহাব উদ্দিন জনি, জামাল উদ্দিন, জনি ভূঁইয়া, ফোরকান জুয়েল এবং বিভিন্ন পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানের ট্যুর গাইডরাও উপস্থিত ছিলেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান জাগো নিউজজে বলেন, দ্বীপের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে জেটি ব্যবহার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে যাওয়া কঠিন। দ্বীপবাসী তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা-নেওয়া করতে পারেন না। জেটির কারণে দ্বীপের লোকজন মারাত্মক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার। এ পরিস্থিতিতে জেটি পারাপার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারি কাজগুলো করা না গেলেও রহস্যজনক কারণে বেসরকারি স্থাপনা ঠিকই উঠছে। অথচ এখানে নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা দপ্তর কাজ করে। জরুরি প্রয়োজনে আসা-যাওয়ায় এসব সংস্থায় নিয়োজিতরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, সেন্টমার্টিনের জেটিটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন। এখানে প্রতি অর্থবছর নিলামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়। এ বছরও নিলাম হয়েছে এক কোটি ২২ হাজার টাকায়। আগের বছরগুলোতে ৭০-৮০-৯০ লাখে নিলাম হয়। জেটিটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। অথচ এটি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হলেও আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন জেটি স্থাপনে হাত দিতে পারছি না। এর পরও জরুরি চলাচলে বেহাল দশা কাটাতে জেটিটি সংস্কারে আদেশ পেতে চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। ৪২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নির্দেশনা এলে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।

‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সেন্টমার্টিনে একটি অত্যাধুনিক জেটি নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নেবো। এ সংক্রান্ত যথেষ্ট ফান্ড আমাদের রয়েছে’-বলেন এ কর্মকর্তা।

আরও খবর