হেলপ কক্সবাজার’র সহায়তায় মাছ চাষে স্বপ্ন বুনছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের উখিয়ার হাঙ্গরঘোনা গ্রামে মাছ চাষ করে দারিদ্র্যমুক্তি ও নিজেদের সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা।

স্থানীয় যুব ক্লাবকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালীকরণের লক্ষে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় মাছ চাষের একটি প্রকল্প দেওয়া হয় পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ সদস্যদের।

তারই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে থেকে এক কানি জায়গার পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক তাদেরকে বিভিন্ন জাতের পোনা এবং মাছের খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে তারা পুকুরটি সংস্কার করে মাছ ছাড়েন এবং সঠিকভাবে মাছের খাবার দেন। নিয়মিত পরিচর্যার ফলে অল্প সময়ে মাছ বড় হতে শুরু করেছে এবং মাছ অপুষ্টিতে বা রোগাক্রান্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন তাদের মৎস্য খামার পরিদর্শনে যান হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম। এসময় তারা পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পুকুরে মাছের খাবার দিতেই রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙাশ, টেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ খাবার খেতে ছুটে আসে। পরে জাল মেরে দেখা যায়, মাছের সাইজ খুব দ্রুত বড় হচ্ছে এবং আর মাসদেড়েক পরিচর্যা শেষে বাজারে বিক্রি করা যাবে। এতে ভালো লাভবান হবে বলে আশাবাদী তারা।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বড়ুয়া বলেন, হেলপ কক্সবাজার এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ এবং মাছ চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরাও খুব খুশি এবং উদ্যোগী হয়েছে। তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কোন রকমের সমস্যা দেখা দেয়নি এমনকি এ পর্যন্ত একটি মাছও মারা যায়নি। মাছের বৃদ্ধিও ঠিক আছে। আশা করছি মাছের বয়স সাড়ে তিন থেকে চার মাস হলে বিক্রি শুরু করব এবং একটু পরিশ্রম করে মাছ চাষ করতে পারলে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, হেলপ কক্সবাজার’র মাধ্যমে মাছ চাষের প্রকল্প পেয়ে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। উৎপাদনমুখী কাজের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা এখন আর বোঝা নয়, সম্পদ।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, মাছ চাষে নিজেদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মাছ বিক্রি করে প্রকল্প আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং লাভের অংশ থেকে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করবো এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াবো।

পরিদর্শন শেষে হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সহ ৪টি স্থানীয় সংগঠনকে প্রশিক্ষণ শেষে সহযোগিতার মাধ্যমে উপার্জনের পথ তৈরি করেছি। উক্ত প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হতদরিদ্র ও এতিম পরিবারের সন্তান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারবে এবং এলাকার উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে আসতে পারবে।

 

এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি, স্থায়ীত্বশীলতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।

পরিশেষে পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান এইড, ব্র‍্যাক এবং হেলপ কক্সবাজার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্র‍্যাকের কারিগরি সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য মানবিক সহায়তা প্রকল্প জালিয়াপালং ও রাজাপালং ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি, স্থানীয়করণ, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার মাধ্যমে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সচেতনতার মাধ্যমে বসতবাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা,পুষ্টি চাহিদা পূরণ, বাড়তি আয়ের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং স্থানীয় যুব ক্লাবকে শক্তিশালীকরণ করার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করতে মুরগীর খামার ও মাছ চাষের প্রজেক্টের মাধ্যমে আয় ও তাদের কর্মমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

আরও খবর