ত্রিমাত্রিক হচ্ছে বিজিবি, বাড়ছে সক্ষমতা

জার্নাল ডেস্ক •

অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে সীমান্ত পাহারায় সক্ষমতা বেড়েছে বিজিবির। যে কারণে সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি, চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধে সামনের দিনগুলোতে আরও কাজ করার সুযোগ আছে বাহিনীটির।

এ জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন–২০৪১’ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি। আগামী পাঁচ বছরে এতে যুক্ত হবে আরও অন্তত ১৫ হাজার সদস্য।

ত্রিমাত্রিক বিজিবি

গত ১৭ জুলাই বিজিবির ৯৬তম নতুন রিক্রুট ব্যাচে ১২৮ জন নারী সৈনিকসহ দুই হাজার ৭৩৬ সদস্য ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন। নতুন এই ব্যাচ থেকেই প্রথমবারের মতো বিজিবি এয়ার উইংয়ের মাধ্যমে ‘রেপেলিং অ্যান্ড ফাস্ট রোপিং’ প্রশিক্ষণ ও ‘অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড উয়েপন’সহ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ শত্রুর ট্যাংক ধ্বংস করার অস্ত্রও পেয়েছে বিজিবি।

স্থল, নৌ ও আকাশে সমান দক্ষতা (ত্রিমাত্রিক) অর্জনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিজিবি সদস্যদের। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসি অ্যান্ড সি) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মু. হাসান-উজ জামান বলেন, ‘কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি বিজিবির কলেবর বৃদ্ধি, সীমান্তে পাকা রাস্তা তৈরি, নারী সৈনিক নিয়োগ, স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার গার্ড সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেমের সাহায্যে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবি ভূমিকা রাখছে।’

এ ছাড়াও বিজিবিতে ‘অল টেরেইন ভেহিকল (এটিভি)’, ‘আর্মার্ড পারসোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি)’, ‘রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল (আরভি)’, হাইস্পিড বোট তথা দ্রুতগতির নৌযান ও অত্যাধুনিক ‘অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উয়েপন’ সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রশিক্ষণের জন্য বিজিবি সদস্যদের বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। আবার বিদেশ থেকেও আসছেন প্রশিক্ষকরা। সাতকানিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় গড়ে তোলা হচ্ছে আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

মাদক ঢুকছেই
এদিকে মাদক কারবারিরা বসে নেই। সীমান্তের যেসব লাগোয়া গ্রাম বা দুর্গম অঞ্চল আছে সেসব এলাকা দিয়েই মাদক আসছে বেশি। এ তালিকায় আছে ইয়াবা, আইস ও ফেনসিডিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে দেশে ইয়াবা জব্দ হয় প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ। ২০১৮ সালে প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ, ২০১৯ সালে প্রায় আড়াই কোটি, ২০২০ সালে প্রায় তিন কোটি ইয়াবা জব্দ হয়।

অপরদিকে ভারতে উৎপাদিত ফেনসিডিলও ধরা পড়ছে প্রতিনিয়ত। ২০১৭ সালে প্রায় ৪০ লাখ বোতল ফেনসিডিল জব্দ হয়। ২০১৮ সালে প্রায় ৩৩ লাখ, ২০১৯ সালে প্রায় ৪০ লাখ এবং ২০২০ সালে জব্দ হয় প্রায় ৪৬ লাখ বোতল।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা ‘মানস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছর যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে তা মোট চোরাচালানের দশ ভাগ মাত্র। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ মাদক ধরাই পড়ে না। এটা আন্তর্জাতিক হিসাব।’

কী করছে বিজিবি?

সীমান্ত এলাকায় সুউচ্চ টাওয়ার বসিয়ে ক্যামেরা স্থাপন করে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা করেছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে কেউ ঘোরাফেরা করলে ধরা পড়বে ক্যামেরায়। এ ছাড়াও বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) ও সীমান্তে রাস্তা তৈরি করে সুরক্ষা আরও দৃঢ় করার কাজ এগিয়ে চলছে।

ছয় বছর আগে একটি বিওপি থেকে আরেকটির দূরত্ব ছিল ১৪ কিলোমিটার। এখন তা ১০ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। নতুন বিওপি নির্মাণ ও সীমান্ত সড়ক হলে তা পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এখন ১৬টি সেক্টর, ৬১টি ব্যাটালিয়ন ও বহুসংখ্যক বিওপির মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি।

বিজিবির মাদক উদ্ধার

অন্যান্য বাহিনীর মতো বিজিবিও দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক জব্দ করে আসছে। ২০১৮ সালে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার বোতল ফেনসিডিল এবং প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করেছে বিজিবি। এ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ গাঁজা, মদ, বিয়ার, হেরোইন ও নেশাজাতীয় দ্রব্য জব্দ করেছে।

২০১৯ সালে যে পরিমাণ চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য আটক করেছিল বিজিবি তার বাজারমূল্য প্রায় ৮০৩ কোটি টাকা। আটককৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৯২ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ৪ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৮ বোতল ফেনসিডিল।

২০২০ সালে সর্বমোট প্রায় ৭৩৮ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন চোরাচালান ও মাদক জব্দ করে বিজিবি। জব্দকৃত মাদকের মধ্যে ছিল প্রায় এক কোটি আট লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬৯ বোতল ফেনসিডিল।

নতুন ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে একে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

আরও খবর