কক্সবাজার প্রতিনিধি •
কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার উপকূলীয় উত্তর গোমাতলীতে লিজ নেয়া জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে পিতা-পুত্রসহ ৪ জনের উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রতিপক্ষরা।
এতে তিনজন রক্তাক্ত জখম ও একজনের হাত-পা ভেঙে গিয়ে চরম আহত হয়েছেন। আহতরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
হাত-পা কয়েক অংশে ভেঙ্গে আহত ব্যক্তি এখনো অপারেশন করতে না পেরে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে।
গত ২৩ আগস্ট বেলা ১১টায় সশস্ত্র হামলায় আহতরা হলো, ঈদগাঁওর পোকখালী ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলীর মৃত ফজল করিমের ছেলে কামাল পাশা (৫৩), আবদু শুক্কুর (৩৫), কামাল পাশার ছেলে তাজনুভা কামাল আবদুল্লাহ (২৭)। আর ২৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে হামলায় আহত হয় ছমি উদ্দিন (৩২)।
আহতদের মাঝে, কামাল পাশার বাম হাত ও বাম পা কয়েক অংশে ভেঙেছে। বাকিরা ফোলা ও রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
প্রহারের পরও ক্ষান্ত হতে না পেরে হত্যার হুমকি দেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় আহতদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আহতরা খেটে-খাওয়া পরিবার হওয়ায় অভিযোগ দেয়ার পরও এখনো মামলা নেয়নি ঈদগাঁও থানা। চিকিৎসাধীন থাকায় তারা বার বার তদবিরও করতে পারছেনা।
তবে, হামলাকারীরা বিত্তবান ও তাদের পরিবারের এক সদস্য পুলিশ অফিসার থাকায় তার প্রভাবে পুলিশ প্রহারকারিদের হয়ে আইনের অপব্যবহার করতে পারে বলে শংকা করছেন ভুক্তভোগীরা। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আহতপক্ষের বিরুদ্ধে প্রহারকারীরা উল্টো মিথ্যা অভিযোগ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব বিষয় দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ধাঁধাঁয় ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে হামলাকারিচক্র।
আহত কামাল পাশা জানান, খেটে-খাওয়া পরিবার হিসেবে তার ছেলে আবদুল্লাহ গোমাতলী ভূমিহীন ও উপনিবেশ সমবায় সমিতির বন্দোবস্তি জমিতে করা একটি পুকুর বাৎসরিক খাজনায় লাগিয়ত নিয়ে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছে গত কয়েক বছর ধরে।
ধারাবাহিকতায় ২০২০ সনের ১০ জুলাই চলতি বছরের জন্য উক্ত পুকুর এবং পুকুরপাড়ে স্থিত গাছসহ লাগিয়ত গ্রহণ করে। আবদুল্লাহ ভূমিহীন সমিতির কাছ থেকে লাগিয়ত নেয়ার পর থেকে পুকুর ছেড়ে দিতে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয় আগে জবর দখল করে খাওয়া সিরাজুল ইসলাম গং।
এতে বিচলিত না হওয়ায় কোন কিছু করতে না পেরে সিরাজ ও আবদুল্লাহর বসতবাড়ির সীমানায় গিয়ে দেয়াল দেয়া শুরু করেন সিরাজের পরিবার। তারা নিজের সীমানা ডিঙিয়ে আবদুল্লাহর বসতির জমিতে দেয়াল দেয়ার চেষ্টা করে। কাজে বাঁধা দেয়া হলে সালিশের আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সাবেক মেম্বার আলতাজ মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ খাঁন আগবাড়িয়ে সালিশকারক হয়ে আমরা পিতা-পুত্রকে সালিশে বসার অনুরোধ করেন। এলাকার দোকানে বসার জন্য তিনি নিজে গিয়ে ডেকে আনেন এবং বলেন তার উপর আস্থা রাখতে। সমাধানের আশায় আমরা পিতা-পুত্র, আমার দু’ছোট ভাইকে নিয়ে সালিশে যায়। বৈঠকে গিয়ে দেখি এলাকার ভাড়াটিয়া হাঙ্গামাকারিসহ কয়েক পক্ষের লোক সেখানে রয়েছে।
ভিন্ন কিছু আঁচ করতে পেরে আমরা চলে আসতে চাওয়া মাত্র অতর্কিত আক্রমণ করে বসে ভাড়াটিয়ারা। প্রহার কিছু হজম করে জখম নিয়ে ছেলে আবদুল্লাহ ও ভাই শুক্কর পালিয়ে আসতে পারলেও আমি পালাতে না পারায় তাদের বেদম প্রহারে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
খবর পেয়ে আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমায় উদ্ধার করতে গেলে হামলাকারীরা আমাকে হাসপাতালে নিতে বাঁধা দেয়। পরে কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব ঘটনাস্থলে গিয়ে আমায় উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে৷ সেখানে এক্স-রে করে ডাক্তার বলেছেন আমার বাম হাত পুরোপুরি ভেঙে গেছে এবং বাম পায়ের হাড় কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লোহার রড ও পাত দিয়ে তা জোড়া লাগানোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন চিকিৎসকরা।
আহত তাজনোভা আবদুল্লাহ বলেন, এলাকার ঘটনা যেহেতু সদর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব বলেছিলেন পরের দিন বিকেলে হামলার ঘটনায় বৈঠক হবে। কিন্তু পরেরদিন তিনটার আগেই দুপুরে দিকে হামলাকারীরা আবারও একতাবদ্ধ হয়ে আমার ছোট চাচা ছমিউদ্দিনকে ধরে প্রহার করে রক্তাক্ত জখমের পর অজ্ঞান করে ফেলে রাখে।
তাকেও হাসপাতালে আনতে বাঁধা সৃষ্টি করলে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে অবগত করার কথা জানার পর তারা সরে যায়।
এরপর ঘরে গিয়ে সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়ায় বাড়ির নারী সদস্যরা আতংকিত হয়ে সন্তানসহ পালিয়ে বিভিন্ন এলাকায় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এখন বড়িতে বৃদ্ধা মুরব্বি ছাড়া আর কেউ নেই। বাবার অপারেশনের সিডিউল না পাওয়ায় আমরা হাসপাতালেই কাতরাচ্ছি।
আবদুল্লাহ আরো জানায়, সিরাজ মিয়া ও আবদুল্লাহ খান এলাকার মোহাজের সমবায় সমিতির দায়িত্বশীল হয়ে হাজার হাজার একর জমি সমেত চিংড়ি ঘেরের আয় তসরুফ করে বিত্তশালী বনেছেন। তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর কারণে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এরা এতদিন ভূমিহীন সমিতির জমিও জোর করে জবরদখলে নিয়ে খেয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে ভূমিহীন সমিতির পুকুর লাগিয়ত নেয়ার পর থেকে তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত।
তাদের সাথে যোগ দেয় সদ্য এসআই পদে নিয়োগ পাওয়া রফিকের পরিবার। রফিকের বাবা জামায়াতকর্মী আবদুস সালামও ভূমিহীন সমিতির বেশ কিছু জমি জবরদখলে খাচ্ছে। এখন ছেলে পুলিশ অফিসার হবার পর তার দাপট আরো কয়েকগুণ বেড়েছে।
সালিশে সিরাজ মিয়া, আবদু সালাম, আবদুল্লাহ খান এলাকার ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল নজরুল, হাকিম, সরোয়ার, জামালসহ ১৫-২০ জনকে এনে আমাদের উপর অতর্কিত হামলে পড়ে। আবদুল্লাহ খান উপযাচক হয়ে সালিশের নামে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের উপর উক্ত আক্রমণের আয়োজন করেছেন।
স্থানীয় মেম্বার মাহমুদুল হক দুখু মিয়া বলেন, একটি বিষয় নিয়ে শালিশী বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে আহত আব্দুল্লাহ বিচারকের আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে শালিশকারক আব্দুল্লাহ খান তাকে থাপ্পড় দেয়। এরপরই অন্যরা আবদুল্লাদের ওপর চড়াও হয় বলে জেনেছি।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিচারক আবদুল্লাহ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সম্পুর্ন ঘটনাটি অস্বীকার করে ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ঈদগাঁও থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, অভিযোগের বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-