কক্সবাজারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যে কারণে খুন হলেন !

বিশেষ প্রতিবেদক •

শুধু জমির বিরোধের কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়নি।  আমার ছেলে স্বপ্ন দেখতো চেয়ারম্যান হয়ে জনগণের সেবা করার। সেজন্য সে আগাম প্রচারণাও চালাচ্ছিল।

কিন্তু সেই প্রচারণা কেড়ে নিল আমার ছেলের প্রাণ।  প্রতিপক্ষ  খলিল উদ্দিন চৌধুরীর ইন্ধনের সন্ত্রাসীরা গুলি করে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দিন ওরফে নোবেল (৪০) এর মা রুফিয়া খানম কাঁদতে কাদঁতে এসব কথা বলেন।

 চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নোবেলকে শুধু জমি বিরোধে হত্যা করা হয়নি দাবি করে তার চাচা শ্বশুর আজিজুল হক বলেন,  ইউপি নির্বাচনে নাছির উদ্দিনের এলাকা সিকদারপাড়া বড় ফ্যাক্টর। নাছিরকে সরিয়ে দিতে পারলে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলের সুবিধা হয়। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নাছির উদ্দিন ওরফে নোবেল  ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।  তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু খলিল উল্লাহ চৌধুরী গত ইউপি ওই ইউনিয়নে  নৌকার প্রার্থী ছিলেন।  তবে তিনি হেরে যান।

এ বিষয়ে  নিহতের স্ত্রী ফারজানা মুন্না বলেন, আমার স্বামী গতবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও খলিল নৌকা প্রতীকে লড়েছেন। দুজনেই হেরে যান। এবার আমার স্বামী জনপ্রিয়তা দলে ও জনগণের মাঝে আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভয়েই পথের কাঁটা ভেবে খলিলের নির্দেশে সরিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

তবে অভিযুক্ত খলিল উল্লাহ  বলেন, গত ২০ দিন ধরে আমি ঢাকায় অবস্থান করছেন। নাছিরের সঙ্গে আমার  বিরোধ নেই। আমাকে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের বলি বানাতে চাচ্ছে একটি পক্ষ।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে পশ্চিম সিকদারপাড়ার কিছু জমি নাছির উদ্দিন নোবেল পক্ষের লোকজনের দখলে ছিল। এই জমি নিয়ে জোলার পাড়ার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আমির হোসেন ও দিয়ার চরের বাসিন্দা এনামুল হকের সঙ্গে নাছিরের বিরোধ ছিল। আমির হোসেন ও এনামুল হক—এ দুজন খলিল উল্লাহ চৌধুরীর অনুসারী ও সমর্থক ।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে নাছিরের লোকজন কাজ করতে গেলে জোলারপাড়া ও দিয়ার চর এলাকার ৩৫–৪০ লোকজন এসে বাধা দেন। এ সময় প্রতিপক্ষের কয়েকজন নাছিরের পক্ষের একজন কৃষককে মারধর করেন।

এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বেলা ১টার দিকে নাছির ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় নাছিরের হাতে মাইক ছিল। তিনি মাইক দিয়ে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। এ সময় সেখানে এনামুল হকও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন । একপর্যায়ে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই এনামুল হক, রুবেল ও আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল বন্দুকধারী অতর্কিত গুলি ছোঁড়ে। লোকজন গুলি ছুড়লে নাছিরসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর নাছিরের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন, নাছিরদের  পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছিল এনামরা। তারা মঙ্গলবার নাছিরের ক্ষেতে কাজ করা এক কৃষককে মারধর করে। নাছির এনামকে কল করলে এনাম বাজারে যেতে বলে। সেখানে আমি সহ  পৌঁছালে কোন কিছুর    বোঝার আগেই এনাম ও তার সঙ্গীরা গুলি করে।

এদিকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকারি চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন বলেন, নাছির উদ্দিনের গায়ে সবটাই ছররা গুলির চিহ্ন। তাঁর ঘাড়ে ও বুকে ২৬টি, কপালে ৫টি, মাথায় ৩ টি ও হাতে ৭টি গুলি লেগেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

পূর্ব বড় ভেওলার ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, এই ঘটনায় হেলাল নামের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে শুনেছি।

jpg-2

চকরিয়া থানার ওসি শাকের মুহাম্মদ যুবায়ের  বলেন, প্রাথমিকভাবে জমির বিরোধে নাছির উদ্দিন নোবেলকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর  বিরুদ্ধে ইন্ধনের  অভিযোগের কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। লিখিত এজাহার পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, নাছিরের হত্যাকে কেন্দ্র করে যেকোন  অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পূর্ব বড় ভেওলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

এদিকে চকরিয়া- পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলম নাছিরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, এমন হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। নাছিরের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে ।

নাছিরের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেল চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন “ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করা, আমাদের সকলের প্রিয়মুখ নাসির উদ্দিন নোবেল চকরিয়ায় সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। (ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন)।এভাবে হত্যার উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখতে হবে। কোন অবস্থায় খুনিদের ছাড় দেয়া যাবেনা।নোবেল হত্যার বিচার চাই, খুনিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাই।

এদিকে নাসিরউদ্দিন নোবেলকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেকের সভাপতিত্বে  গতকাল রাতে নগরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

jpg-33

ছাত্রলীগ ধারাবাহিক কর্মসূচি দিবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ-কমিটি সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু  জানান, ‘ছাত্রলীগ নেতা নাসির উদ্দীন নোবেলকে পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নয়তো ছাত্রলীগ ধারাবাহিক কর্মসূচি দিবে বলে জানান তিনি।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইয়াছিন আরাফাত কচি, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, উপ প্রচার সম্পাদক এম এ হালিম মিতু, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সরফুর আনাম জুয়েল, এম হাসান আলী, সাইফুদ্দিন সান্টু, জাহেদুল ইসলামসহ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

আরও খবর