বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১২ জনকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পৌঁছে দিয়েছেন জেলেরা। নিখোঁজদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে ভাসানচর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে। সাগরে নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
কোস্টগার্ড জানায়, ধারণা করা হচ্ছে- শুক্রবার গভীর রাতে রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু বোঝাই একটি নৌকা ভাসানচর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ভাসানচর থেকে দুই থেকে আড়াইঘণ্টা চলার পর নৌকাটি সমুদ্রের বৈরী আবহাওয়ার মুখে পড়ে উল্টে যায়। এতে নৌকাটিতে থাকা পুরুষ, নারী ও শিশুরা উত্তাল সাগরে ছিটকে পড়ে। কেউ কেউ সাঁতরে আশপাশের মাছ ধরার ট্রলারে আশ্রয় নেয়। মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা ১২ জনকে উদ্ধার করে শনিবার ভোরে ভাসানচরে পৌঁছে দিয়েছে।
তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে নামে কোস্টগার্ডের ভাসানচর, সন্দ্বীপ ও সারিকাইত স্টেশন। কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের দুইটি জাহাজও তাদের সন্ধানে যায়।
এ ছাড়া নৌ বাহিনীর জাহাজ ও হেলিকপ্টারও নিখোঁজদের সন্ধানে বঙ্গোপসাগরে ‘সার্চ অপারেশনে’ চালাচ্ছে।
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌকাডুবির পর মাছ ধরার নৌকার মাঝি-মাল্লারা ১২ জনকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পৌঁছে দিয়েছে। এ ছাড়া যারা ফিরে এসেছে তারা নিখোঁজদের নিয়ে একেক সময় একেক সংখ্যা বলছে, তাই এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ আছে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চলছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম আব্দুর রউফ বলেন, ‘রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুইটি জাহাজ বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান অভিযানে রয়েছে।’
অনুসন্ধানে থাকা কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্ঘটনাটি আসলে কোথায় ঘটেছে সেটি বেঁচে আসা রোহিঙ্গা ও কোন জেলে বলতে পারছে না।
তবে অনুমান করা হচ্ছে ভাসানচর থেকে ১৫ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরুত্বে দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোথাও এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা ভাসানচরের নিম্নাঞ্চলে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত কাউকে খুঁজে পাইনি। ধারণা করা হচ্ছে তারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।’
ভাসানচর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাডুবির পর আশপাশের মাছ ধরার নৌকায় থাকা জেলেরা ১২ জনকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পৌঁছে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে নৌকায় ৩৭ থেকে ৩৮ জন ছিল। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক নৃশংস অভিযান শুরু করলে প্রায় দশ লাখ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার প্রায় ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। কিছুদিন সেখানে থাকার পর তারা বিভিন্নভাবে ভাসানচর থেকে পালানো শুরু করে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম হয়ে পালাতে গিয়ে তারা অনেকে পুলিশের হাতেও ধরা পড়ে। সমকাল
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-